কুষ্টিয়ায় বিএনপি-জামায়াতের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ১১

কুষ্টিয়ায় বিএনপি-জামায়াতের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত ১১

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া
জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ০৭:২২ ২০ মে ২০২৫

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী গাজীকালু-চম্পাবতী মেলাটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মেলা বসানো নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ভাঙচুর-লুটপাটের শিকার হন অনেক সাধারণ ব্যবসায়ী, যারা জীবিকার তাগিদে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে দোকান বসিয়েছিলেন।

সন্ধ্যার ঠিক আগে বাজারটিতে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ। কেউ বলছে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই বিএনপি সমর্থকরা মেলা বসাতে চেয়েছিল। অন্যদিকে জামায়াত নেতারা বলছেন, মেলায় অশ্লীলতা আর জুয়ার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে তারা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই 'প্রতিবাদ' শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত সংঘর্ষে গড়ায়।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, বৃদ্ধ, ব্যবসায়ীসহ দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা। জামায়াতের আহতদের মধ্যে ছিলেন জগন্নাথপুর উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ৭০ বছরের কুদ্দুস প্রামাণিকসহ ছয়জন। তারা কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। বিএনপির পক্ষ থেকে আহত হয়েছেন খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, শিক্ষক টিপু সুলতানসহ পাঁচজন। তাদের কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দোকানদারদের ভাষায়, এমন ভয়াবহ দৃশ্য আগে কখনও দেখেননি। পাবনার চাটমোহর থেকে আসা আরজ আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “সন্ধ্যার একটু আগে কয়েকশ টুপিপরা লোক দোকানে এসে রামদা, লাঠিসোঁটা দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। আমি প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাই। পরে এসে দেখি, দেড় লাখ টাকার মালামাল গায়েব। সব শেষ।”

একই রকম আতঙ্কে ছিলেন বাজারের কলা ব্যবসায়ী নাদের শেখও। তিনি বলেন, “শত বছর ধরে এখানে মেলা হচ্ছে। আজ প্রথম দেখলাম দুই দল লড়াই করছে। ওরা অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। আমি চোখের সামনে ভাঙচুর দেখেছি।”

এদিকে জামায়াত নেতাদের দাবি, তারা শুধু মেলার অশ্লীলতা বন্ধের দাবিতে গিয়েছিলেন। উল্টো তাদের ওপরই হামলা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, জামায়াতপন্থীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে দোকানপাট লুট করে দিয়েছে। দুই পক্ষই থানায় মামলা করার ঘোষণা দিয়েছে।

কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, “এ বছর মেলার কোনো অনুমতি ছিল না। দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এলাকার সাধারণ মানুষ বলছেন, রাজনীতির নামে এই হানাহানি তারা চান না। শত বছরের ঐতিহ্যকে সামনে রেখে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব করার আশাই ছিল সবার। কিন্তু আজ সেই আশার মেলাই রক্ত আর আতঙ্কে ঢেকে গেছে।

বিজ্ঞাপন