বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০১:৪৮ ৩১ আগস্ট ২০২৪
নদ-নদীর দেশ বাংলাদেশ। একসময় এ দেশের বুক চিড়ে বয়ে যেতো ছোট-বড় অসংখ্য নদী। জীবন-জীবিকার অনেক কিছুই ছিল একসময় নদীকেন্দ্রিক। ফলে এ দেশের মানুষ হাঁটা-চলা শেখার মতোই জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে শিখতো সাঁতার। কিন্তু নদ-নদী কিংবা জলাধার সংকুচিত হয়ে যাওয়া বড় বড় শহরে, এমনকি মফস্বল শহরেও সাঁতার শেখার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। অনেকে সাঁতার শেখার গুরুত্ব সম্পর্কে ভুলে যাচ্ছেন। কিন্তু বিভিন্ন দুর্যোগের সময় সাঁতার যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা উপলব্ধি করা যায়। প্রায় প্রতি বছর নৌকাডুবিতে কিংবা পানিতে ডুবে অসংখ্য মৃত্যুর খবর দেখতে পাওয়া যায়।
শিশুদের জন্য পানিতে ডুবে মৃত্যু এক প্রকার নীরব মহামারি। এ ধরনের মৃত্যু ঠেকাতে শিশুকে সাঁতার শেখানোর কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টিকে মাথায় রেখে কুড়িগ্রামের চিলমাীতে ওয়াল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ এর প্রত্যাশা প্রকল্পের আওতায় জার্মান দাতা সংস্থা কিন্ডার নট হেলপি এর আর্থিক সহায়তায় এবং উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের ডিফেস এর সহযোগিতায় ৫দিন ব্যাপী শিশু সাঁতার প্রশিক্ষনের আয়োজন করে।
উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের থানাহাট,হেলিপ্যাড পুকুরে রমনা মডেল ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ৬০জন ৮-১২বছর বয়সের শিশুকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
দক্ষিণ রাধাবল্লভ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা,মুন্নি, রানীগঞ্জ মোদন মোহন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী লাবিবা , কেডিএবি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফিমামনি, ডিএ চিলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা, মিথিলা বলেন,সাঁতার শিখতে পেরে আমরা খুব খুশি আমরা সাঁতার আগে জানতাম না এখানে এসে সাঁতার লিখলাম।
অভিভাবক সাওরাত হোসেন বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে দীর্ঘদিন যাবৎ সাঁতার শেখানোর কথা ভাবছিলাম। কিন্তু কোথাও সুযোগ পাচ্ছিলাম না। এই এনজিওর উদ্যোগের ফলে আমার ছেলে এখানে সাঁতার শিখতে পেরেছে। আমি কিছুটা চিন্তামুক্ত হতে পারলাম।
চর উদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলু মিয়া বলেন, ‘সাঁতার শেখানোর এই চমৎকার উদ্যোগে আমাদের শিক্ষার্থীদের যে কী উপকার হলো, তা বলে বোঝানো যাবে না।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুকুজ্জামান শাহীন বলেন, শিশুদের সাঁতার শেখানো। একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে হলে সাঁতার শিখতেই হবে। ওয়াল্ড কনসার্ন বাংলাদেশ এনজিও এই উদ্যোগটি নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
ওয়াল্ড কনসার্ন বাংলাদেশের প্রত্যাশা প্রকল্পের প্রোজেক্ট অফিসার আবদুল মালেক সরকার বলেন, এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকায় শিশু অধিকার, নারী অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং হতদরিদ্র মানুষের আত্মসামাজিক উন্নয়নসহ দূর্যোগ মোকাবেলা নিয়ে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় চিলমারী উপজেলার থানাহাট, রমনা এবং রানীগঞ্জ ইউনিয়নের হতদরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুদের উন্নয়ন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কিন্ডারনটহিলফে ( কেএনএইচ)- জার্মানীর আর্থিক সহযোগিতায় প্রত্যাশা ( প্রোটেকটিং ওম্যান এন্ড চিল্ড্রেন ফ্রম এবিউজ থ্রু সেল্ফ হেল্প এপ্রোচ) প্রকল্প ২০১৯ সাল থেকে কাজ করে আসছে। চিলমারী একটি দূর্যোগ প্রর্বন এলাকা তাই শিশুদের সুরক্ষার জন্য ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর ৬০ জন করে ৫ দিন ব্যাপী সাঁতার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ আগষ্ট থেকে ৬০ জন শিশুকে সাঁতার প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করেন ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মকর্তারা। সাঁতার শিখতে পেরে শিশুরা খুব খুশি।
বিজ্ঞাপন