বৃহস্পতিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৩:৪৫ ২৭ মে ২০২৪
ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ হচ্ছে ‘টি-টোয়েন্টি’। জমজমাট আসর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২০২৪-এর পর্দা উঠবে কদিন পরেই। ক্রিকেটপ্রেমীরা বিশ্বকাপের উন্মাদনায় বুঁদ হয়ে আছে এখন থেকেই। ভাবনায় যখন টি-টোয়েন্টির মতো জমজমাট আসরের কথা, প্রশ্ন তখন দলগত পারফরম্যান্স নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডেতে যতটা দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে বাংলাদেশ দল, আশার প্রদীপ ততটাই নিভু নিভু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বেলায়।
এই ফরমেটে আমরা যেন এখনো একটু বেশই অপরিপক্ব। এর টাটকা উদাহরণ সবশেষ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ। এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের কাছে যেভাবে ধরাশায়ী হতে দেখা গেল, তাতে করে বেশ ভালোমতোই বোঝা যায়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমাদের অবস্থান কতটা তলানিতে!
অনিয়ন্ত্রিত বোলিং, ব্যাটিং লাইনআপে বিরতিহীন ধস নামাসহ আমাদের অবনতির মূল কারণ হচ্ছে ‘হতাশায় ভোগা’। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টাইগাররা যেন একটু বেশিই নার্ভাসনেসে ভোগেন! এক্ষেত্রে কনফিডেন্সে ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। অথচ এই ফরমেটে বাংলাদেশ দল খেলছে অনেক আগে থেকেই।
লক্ষণীয়, ডেথ ওভারে দলের কান্ডারি হয়ে ওঠার মতো যেন কেউ নেই। একইভাবে শেষটা রাঙিয়ে নেওয়ার মতো ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠার মতো কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থাত্, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়াতে গিয়ে বারবার দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে পড়ে গোটা টিম। টপ অর্ডার ব্যাটারদের টানা ব্যর্থতা ও নিম্নমানের স্ট্রাইকরেটের কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়া দলের চেনা রূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এত বছরেও ভয়ডরহীন খেলতে না পারার মানসিকতা আমাদের দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি বইকি। তবু সমর্থকেরা প্রতিবারই আশায় বুক বাঁধে। একটা সুন্দর আসরের পরিসমাপ্তি দেখার জন্য শত-সহস্র চোখ পলকহীন তাকিয়ে থাকে টেলিভিশনের দিকে। তবে দুঃখজনকভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফলাফল ‘আশায় গুড়েবালি’। এই যখন অবস্থা, তখন প্রশ্ন থেকেই যায়, ‘ঠিক কতটুকু আশা করা উচিত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছ থেকে?
সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের স্মৃতি মনে রাখার মতো নয়। তবে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পারফরম্যান্সের বিচারে বাংলাদেশ মোটামুটি সফল। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ জয়ের স্বাদ পেয়েছে মাত্র তিনটি ম্যাচে। প্রথম জয় এসেছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে তথা উদ্বোধনী আসরে। পরের গল্পগুলো শুধুই হতাশার। একে একে ছয়টি আসরে মূল পর্বে জয়শূন্য থেকেই বিদায় নিয়েছেন টাইগাররা।
জয় সোনার হরিণ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ টিমের জন্য। সবশেষ আসরে জয়ের স্বাদে ভাঙে পরাজয়ের বৃত্ত। অষ্টম আসরে দুটি ম্যাচে জয়ী হতে সক্ষম হয় টিম টাইগার্স। ফলাফলের এই পৃষ্ঠাটা এবারের আসরে জয়ের ব্যাপারে আমাদের তীব্র আশাবাদী করে তোলে।
দলের সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্সের কারণে আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে বাজি ধরবে এমন লোকের সংখ্যা নিতান্তই কম। হতাশার ছাপে আশার পারদ একদম তলানিতে। এহেন অবস্থায় পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে।
বলা হয়, একটা দলের প্রাণ হতে পারেন তরুণ খেলোয়াড়েরা। কোচের গোপন অস্ত্র, তুরুপের তাস কিংবা ট্রামকার্ড—যা-ই বলি না কেন, সব ক্ষেত্রে তরুণেরাই হতে পারেন ভরসার জায়গা। তারুণ্যনির্ভর বাংলাদেশ দল অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই বিশ্বকাপে ভালো ফল করবে বলেই আমরা আশাবাদী। বাংলার দামাল ছেলেদের বিশ্বকাপ মাতানো দেখার অপেক্ষায় কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী বাঙালি। বিজয় আসবেই!
লেখক :শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ
বিজ্ঞাপন