মঙ্গলবার , ২২ জুলাই, ২০২৫ | ৭ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৩:৩১ ২২ জুলাই ২০২৫
চীন শুরু করেছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ। তিব্বতের দুর্গম অঞ্চলে ইয়ারলুং স্যাংপো নদীর উপর তৈরি হচ্ছে এই বিশাল বাঁধ। এটিকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বলছেন “শতাব্দীর প্রকল্প”। অথচ এই প্রকল্প ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ—বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের মতো নিচের দিকের দেশগুলোর জন্য, যাদের জীবন-জীবিকা এই নদীর পানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
এই নদীই ভারতে গিয়ে ‘ব্রহ্মপুত্র’ আর বাংলাদেশে ‘যমুনা’ নামে পরিচিত। এই নদীর গতিপথে বড় বাধা তৈরি হলে কেবল পরিবেশ নয়, কোটি মানুষের জীবনে নেমে আসতে পারে বড় বিপর্যয়।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, পাঁচটি ধাপে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। বছরে ৩০ কোটি মেগাওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য থাকছে, যা হতে পারে বিশ্বের সর্বোচ্চ। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার খবরে যতটা চীনে উল্লাস, ততটাই দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঁধ তৈরির মাধ্যমে চীন চাইলে নদীর পানি আটকে রাখতে পারে, কিংবা প্রবাহের গতি-দিক বদলে দিতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, চীন যেন নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে হস্তক্ষেপ না করে। বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন, কারণ এই নদীর পানি কমে গেলে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবনধারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
পরিবেশবাদীরাও এই প্রকল্পকে দেখছেন এক বিশাল ঝুঁকি হিসেবে। যেখানে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, সেই জায়গাটি ভীষণ ভূমিকম্পপ্রবণ এবং ভূমিধসের ঝুঁকি অনেক বেশি। স্থানীয় বন্যপ্রাণী, গাছপালা, এমনকি হাজার বছরের পুরনো বৌদ্ধ মঠ ও গ্রামগুলোও এই প্রকল্পের কারণে হারিয়ে যেতে পারে।
তিব্বতের স্থানীয় বাসিন্দারা ইতোমধ্যে ভয় পাচ্ছেন উচ্ছেদের। অতীতে চীনের অন্য জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো নিয়েও প্রতিবাদ হয়েছে। যেমন ইয়াংজ্টি নদীর পাশে কামতক বাঁধ নিয়ে প্রতিবাদ করায় শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছিল সরকার।
এই বাঁধ প্রকল্পের আরেকটি দিক হলো চীনের রাজনৈতিক প্রভাব। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, বরং পানিকে কৌশলগত “অস্ত্র” হিসেবে ব্যবহারের হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এটি হতে পারে এক নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ।
চীনা সরকার অবশ্য বলছে, তারা প্রতিবেশীদের স্বার্থ রক্ষা করেই কাজ করবে এবং পরিবেশ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং বলেছেন, “প্রকৃতি ধ্বংস করে নয়, বরং পরিবেশ রক্ষা করেই উন্নয়ন করতে হবে।”
তবে বাস্তবতা হলো, এই প্রকল্প সফল হলে চীন অনেকটা একতরফাভাবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই উন্নয়ন কি হবে সবার কল্যাণে, নাকি নতুন সংকটের জন্ম দেবে?
বিজ্ঞাপন