তেঁতুলিয়ায় সদ্য নির্মিত সড়ক দেবে গেল ১৫ দিনেই, অনিয়মে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

তেঁতুলিয়ায় সদ্য নির্মিত সড়ক দেবে গেল ১৫ দিনেই, অনিয়মে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়
জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ০৭:৩৪ ২৪ মে ২০২৫

পাকা রাস্তা, সেই আশায় বুক বেঁধেছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের মানুষ। বাজার থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত যাতায়াতে আর ধুলো, কাদা বা খানাখন্দের ভোগান্তি থাকবে না—এমন স্বপ্ন নিয়েই শুরু হয়েছিল প্রায় দেড় কোটি টাকার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। নির্মাণের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় দেবে গেছে সেই নতুন সড়ক। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর প্রশ্ন—"এই উন্নয়নে আমাদের কী লাভ?"

গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলের ঘটনা। একটি ইটবোঝাই ট্রাক মসজিদের সামনে দিয়ে রাস্তা দিয়ে পিছিয়ে আসছিল। হঠাৎ করেই রাস্তার একটি বড় অংশ দেবে যায়। চালক হকচকিয়ে যান, আর পথচারীরা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। তখনই স্পষ্ট হয়—নতুন সড়কটি ভিতরে ভিতরে ছিল ফাঁপা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বুধারু বলেন, “ইট নামানোর জন্য ট্রাকটা একটু পিছিয়ে ছিল। হঠাৎ দেখি মসজিদের সামনে রাস্তা ভেঙে নিচে বসে গেল। এর আগেও একবার ভেঙেছিল, তখনও তড়িঘড়ি করে কাজ করেছে। এবারও শুধু খোয়া আর বালি ফেলে চলে গেছে, রোলার তো চালায়নি বলেই মনে হয়!”

একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আরেক বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম। তাঁর কথায়, “রাস্তা তো বানানো হয়নি, শুধু ঢেকে দিয়েছে। এখন একটু ওজন পড়লেই ভেঙে পড়ছে। আমরা এই কাজ মানি না।”

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের যে অংশ দেবে গেছে, সেখানে একদম নিচ পর্যন্ত গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। চারপাশের মানুষ ক্ষোভে-অভিমানেই বলছেন—“এই রাস্তা কোনোদিন টিকবে না, যদি এমনভাবে কাজ হয়।”

এলজিইডির পক্ষ থেকে জানা গেছে, প্রায় ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বুড়াবুড়ি বাজার থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ১,৫৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক। কাজটি বাস্তবায়ন করছে ‘জারা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রকল্পটি এককভাবে নয়, স্থানীয় কয়েকজন মিলে বাস্তবায়ন করছে বলেও জানা গেছে।

রাস্তায় ব্যবহৃত সামগ্রী নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাথর, বালি, ডাস্ট—সবই ছিল নিম্নমানের। আর প্রাইম কোট ছাড়াই কার্পেটিং করে দেওয়া হয়েছে, যেন শুধু ‘দেখানো’র জন্য কাজ।

তদারকির দায়িত্বে থাকা এলজিইডির সার্ভেয়ার জয়নাল আবেদিন অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রাস্তায় অতিরিক্ত ওজনের গাড়ি উঠেছিল, সে কারণেই ভেঙে গেছে। কাজ ভালোভাবেই হয়েছে। যেটুকু সমস্যা হয়েছে, ঠিকাদার ঠিক করে দেবে।”

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ—এই সার্ভেয়ারই একাধারে সব প্রকল্পের ‘অঘোষিত কর্তা’। তিনিই প্রকল্প তদারকি করেন, আবার সাইট ইঞ্জিনিয়ারের কাজও দেখেন। এতে তদারকির নামে দায়সারা ভাব তৈরি হয়েছে।

ঘটনার পরপরই উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান জানান, “আমরা ইউএনও স্যারকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরুও জানান, “ঘটনাটি শুনেছি। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিজ্ঞাপন