শনিবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৫ | ৭ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:২১ ২১ আগস্ট ২০২৫
ইরানের এক শীর্ষ নেতা সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র শুধু ইসরাইল নয়, সরাসরি আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনকেও আঘাত করতে সক্ষম। এই ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনার ঝড় উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সীমাবদ্ধতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন তা বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘খোরামশর ফাইভ’ আসছে। সম্প্রতি ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়ায়, যেখানে একটি বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপিত হচ্ছে। যদিও ভিডিওটি ২০২৩ সালের খোরামশর ফোর-এর, তা নতুন প্রযুক্তিগত সম্ভাবনার ইঙ্গিত তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খোরামশর ফাইভ ইরানের প্রথম আইসিবিএম (ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল) হতে পারে। এর পাল্লা প্রায় ১২,০০০ কিলোমিটার, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম। এর গতিবেগ মার্ক ১৬, অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার, যা হাইপারসোনিক অস্ত্রের উচ্চ প্রযুক্তির নির্দেশ দেয়।
২০১৫ সালে ইরান ঘোষণা করেছিল যে তারা ২০০০ কিলোমিটারের বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে না। যুক্তি ছিল আঞ্চলিক হুমকি মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বর্তমান উত্তেজনা, আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ইরানকে এই পূর্ব প্রতিশ্রুতি পুনর্মূল্যায়ন করতে প্ররোচিত করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসিবিএম তৈরি করা শুধু রাজনৈতিক নয়, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও চ্যালেঞ্জিং। মহাকাশে উৎক্ষেপণ, বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ এবং লক্ষ্যবস্তুতে সঠিক আঘাত—সবই জটিল গণনার ওপর নির্ভর।
খোরামশর ফাইভ-এর ওয়ারহেড প্রায় দুই টন, যা অনেক দেশের পারমাণবিক বা বাংকার-বাচ্চা বোমার সমতুল্য। তবে পুরো পাল্লা বহনযোগ্যতা এখনো নিশ্চিত নয়। ইরান ইতিমধ্যেই হাইপারসোনিক ‘ফাত্তাহ’ ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে দেখিয়েছে তারা জটিল তাপ প্রতিরোধী উপাদান ও গাইডিং সিস্টেম তৈরি করতে সক্ষম।
বর্তমানে খোরামশর ফাইভ সরকারি ঘোষণার চেয়ে গুজব ও প্রযুক্তিগত সম্ভাবনার আলোচনার মধ্যে রয়েছে। জুনে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসির জাদে জানিয়েছেন, তারা দুই টনের ওয়ারহেড হাইপারসোনিক গতিতে পরীক্ষায় ব্যবহার করেছে, যা অনেকের কাছে খোরামশর ফাইভ-এর প্রাথমিক রূপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই প্রযুক্তিগত উত্তরণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কূটনীতি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে, যেখানে ইরান শুধু আঞ্চলিক নয়, গ্লোবাল প্রতিরক্ষা মানচিত্রেও গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন