বড় গরু নিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা, ফিরছেন খালি হাতে!

বড় গরু নিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা, ফিরছেন খালি হাতে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মোরনিউজবিডি.কম
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, মোরনিউজবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৭ ৬ জুন ২০২৫

ঈদুল আজহা দরজায় কড়া নাড়ছে। কেবল আর এক দিন বাকি। গাবতলী পশুর হাটে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা চলছে পুরোদমে। চারপাশে ছোট ও মাঝারি গরুর কেনাবেচায় গমগম করছে হাট। কিন্তু ঠিক সেই ভিড়ের মাঝেই এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকছে বড় আকারের শক্ত-পুষ্ট গরুগুলো—যেন নিজের কপালের জন্য অপেক্ষায়। কেউ এগোচ্ছে না, কেউ দাম জানতে চায় না, কেউ চোখ ফেরায় না।

কুষ্টিয়ার খাজানগর থেকে সাতটি বিশাল গরু নিয়ে রাজধানীতে এসেছেন খামারি নওয়াব আলী। তিন দিন ধরে হাটে দাঁড়িয়ে। গায়ে গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্রেতার খোঁজে। কিন্তু ফল—মাটিতে। গলার স্বরে হতাশা স্পষ্ট, “দুইটা গরু বিক্রি করেছি, কিন্তু লাভ তো দূরে থাক, খরচই উঠবে না। একটা গরুর দাম বললাম ১৫ লাখ, একজন বলল ৮ লাখ। এমন লোকসানে কীভাবে ছাড়ব বলেন? এখন তো মনে হচ্ছে, গরু বিক্রি না করাটাই লস!”

মেহেরপুর থেকে আসা আরেক খামারি খলিলু রহমান প্রায় কেঁদেই ফেলেন, “বড় গরু এনে মনে হচ্ছে আমি যেন কোনো অন্যায় করে ফেলেছি! কেউ দেখে না, কেউ দামও জিজ্ঞেস করে না। সবাই ছোট গরুর পেছনে ছুটছে। এই দেশে কি বড় গরু কেনার মতো লোক নেই?”

বাজার ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতারা দলে দলে হাটে আসছেন। কেউ এসেছেন একা, কেউবা পুরো পরিবার নিয়ে। শ্যামলীর বাসিন্দা মো. ইয়াসিন বললেন, “গতকাল গরু দেখেছি, কিনতে পারিনি। আজ না কিনে উপায় নেই। কিন্তু বড় গরুর দিকে তাকানোর সাহসই হচ্ছে না। দাম আকাশছোঁয়া। পছন্দ আর সাধ্যের মাঝে যুদ্ধ চলছে।”

গরু কিনেছেন হাবিবুর রহমান। বললেন, “একটা ছোট গরু কিনেছি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে। কিন্তু বাড়ি নিতে পিকআপ চাইছে তিন হাজার টাকা! তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, হেঁটেই নিয়ে যাব। ঈদের খুশিতে একটু কষ্ট করলে ক্ষতি কী?”

আরেক কোণে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইদ্রিস নামে এক গরু বিক্রেতা। গলায় চাপা ক্ষোভ আর অভিমান, “সপ্তাহজুড়ে তিনটা গরু বিক্রি করেছি। বাকি গরুগুলো দাঁড়িয়ে আছে তাকিয়ে তাকিয়ে। লাভ তো দূরের কথা, যদি খরচটুকুই তুলতে পারতাম, ছেড়ে দিতাম গরু। এখন মনে হয় টাকাওয়ালা লোকেরা সবাই গায়েব হয়ে গেছে। কী যে হচ্ছে, বোঝা মুশকিল!”

হাটের দক্ষিণ পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে কিছু বিশাল দেহের গরু—শাহিওয়াল আর ফ্রিজিয়ান জাতের। ওদের চোখেও কেমন যেন এক নিরাশা। হাটে আগতরা কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার অন্যদিকে চলে যাচ্ছেন। বড় গরুর বিক্রি নেই বললেই চলে।

গাবতলীর ২ নম্বর হাসিল ঘরের দায়িত্বে থাকা জাকিরুল আলম বললেন, “ছোট গরু চলছে বেশি। বড় গরুর বিক্রি খুবই কম—হাজার গরুর মধ্যে এক-দু’টো বিক্রি হচ্ছে। আগের মতো বড় গরুর প্রতি মানুষের আগ্রহ নেই এখন।”

সবশেষে, এ হাট যেন কেবল বেচাকেনার জায়গা নয়—এখানে মিশে আছে অনেক খামারির বছরব্যাপী স্বপ্ন, শ্রম আর ভালোবাসা। বড় গরু বিক্রি না হলে কেবল ব্যবসায়িক লোকসান নয়, ভেঙে পড়ে সেই আশা, যে আশায় কেউ রাত-দিন গরু লালন করেছেন, খাবার দিয়েছেন, চিকিৎসা করিয়েছেন।

এই হতাশার মাঝেও একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মুখে মুখে—এই দেশে কি ১০ লাখ টাকার গরু কেনার মতো কেউ নেই?

বিজ্ঞাপন