শনিবার , ০২ আগস্ট, ২০২৫ | ১৮ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:১১ ১ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিক–এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গোপন প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। সেনা সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, তাকে আটক করে বর্তমানে সেনা হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং তদন্তের জন্য সামরিক আদালত গঠন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসে অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান সেনা সদরের সামরিক অপারেশনস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা। তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, মিরপুর, ভাটারা, কাটাবন ও পূর্বাচল এলাকায় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে গোপনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত ৮ জুলাই ভাটারা থানার একটি কনভেনশন সেন্টারে সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ সেশন হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দু’দিন আগেই একটি টোকেন সরবরাহ করা হয়েছিল।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, প্রশিক্ষণের আয়োজন ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন মেজর সাদিক। তাকে ১৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরা থেকে আটক করে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট। জানা গেছে, তিনি কক্সবাজারের রামু ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন।
এছাড়া, গোয়েন্দা তথ্য বলছে, মেজর সাদিকের সঙ্গে প্রশিক্ষণে সহযোগিতা করেছেন তার স্ত্রী, পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমাইয়া জাফরিন। তাদের দু’জনের অনুপস্থিতির সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রশিক্ষণের সমন্বয় করেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, এই পুরো পরিকল্পনার মূল পর্যবেক্ষণ করছেন কলকাতায় অবস্থানরত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার সঙ্গে সহযোগিতায় রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, পলাতক অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম, এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান।
পুলিশের তরফ থেকেও এ বিষয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে উত্তরার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা এবং আওয়ামী লীগের নেত্রী শামীমা নাসরিন (শম্পা), যাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতেই মেজর সাদিকের নাম সামনে আসে।
আজ শুক্রবার সেনাবাহিনীর জনসংযোগ অধিদপ্তর আইএসপিআর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সেনা হেফাজতে নেওয়া মেজরের বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। পুরো তদন্ত শেষে সেনা আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা অঙ্গনে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্য দিয়ে আবারও রাজনৈতিক প্রভাব ও সেনা সদস্যদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন