বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ সবসময়ই অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। কিন্তু বর্তমানে কিছু মহল দেশকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিভাজনের চেষ্টা করছে, যা দেশের জন্য অমঙ্গলজনক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ আবারও প্রমাণ করবে যে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয় চেতনায় বিশ্বাসী একটি দেশ।

আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করেছি একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা ও জাতীয় পরিচয়ের জন্য। কিন্তু এখন সেই চেতনা থেকে আমাদের সরে নেওয়ার একটি অপচেষ্টা চলছে। দেশের রাজনীতিতে এমন কিছু প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা আমাদের ঐক্য ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের জন্য হুমকিস্বরূপ।”

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি—বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বিএনপি সব সময়ই এমন একটি বাংলাদেশ চায়, যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার ভোগ করতে পারে।”

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation - PR) পদ্ধতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত এই পদ্ধতিটি এখন বাস্তবায়ন করা উচিত নয়, কারণ এটি জনগণের কাছে নতুন ও অপরিচিত। তিনি বলেন, “এই পদ্ধতি চালু করলে ভোটারদের ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী নির্বাচনের স্বাধীনতা কমে যাবে। জনগণকে ব্যক্তি নয়, দলকে বেছে নিতে হবে—যা গণতন্ত্রের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা সব সময়ই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিকার অর্থে এমন নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, তাহলে জনগণের অংশগ্রহণ ও আস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

মির্জা ফখরুল সতর্ক করে বলেন, “হঠাৎ করে নতুন ভোট পদ্ধতি চালু করলে জনগণ বিভ্রান্ত হবে। এখন দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক সরকার ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছে। তাই নতুন কোনো পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রয়োগের সময় এটি নয়।”

বিএনপি মহাসচিবের মতে, জনগণের সরাসরি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের মূল শক্তি। তাই তিনি সরকারকে আহ্বান জানান—আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে, যাতে জনগণ নিজের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারে এবং প্রকৃত অর্থে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিতে পারে।