ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ফিরলেও, জয়ী চীন?

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ফিরলেও, জয়ী চীন?

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৬:৫৯ ২০ মে ২০২৫

চারদিন ধরে চলা গোলাগুলি, বিমান হামলা আর উত্তেজনার পর অবশেষে থেমেছে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের সংঘর্ষ। দুই দেশই নিজেদের জয় দাবি করছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য ভিন্ন—তাঁদের মতে, এই লড়াই থেকে সবচেয়ে বেশি লাভ করে নিয়েছে তৃতীয় পক্ষ চীন।

সব শুরু হয়েছিল ২২ এপ্রিল, এক ভয়ঙ্কর হামলার মধ্য দিয়ে। কাশ্মীরের পেহেলগামে একদল পর্যটকের ওপর চালানো গুলিতে প্রাণ হারান ২৬ জন। ছুটির দিনে বেড়াতে গিয়ে যারা আর বাড়ি ফিরতে পারেননি, সেই ঘটনাই যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালে। ভারত অভিযোগ তোলে, এই হামলার পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীর হাত রয়েছে। আর তার জবাব দিতে ভারত ৭ মে শুরু করে ‘অপারেশন সিদুর’।

এরপর আর থেমে থাকেনি কিছুই। ড্রোন উড়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, আকাশে গর্জে উঠেছে যুদ্ধবিমান। ভারত আক্রমণে ব্যবহার করেছে রাফাল ও সুখই যুদ্ধবিমান, আর পাকিস্তান দিয়েছে জবাব চীনের বানানো জে-১০ আর জেএফ-১৭ দিয়ে। ইসলামাবাদ বলছে, তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। দিল্লি সে কথা পুরোপুরি অস্বীকার না করলেও, কিছু বলতেও নারাজ।

এখানেই চীনের গল্পটা শুরু। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা অনেকটাই চীনা প্রযুক্তিনির্ভর। আর সেটাই যদি সফল হয়ে থাকে, তাহলে যুদ্ধের ময়দান চীনের অস্ত্রশক্তি দেখানোর বাস্তব মঞ্চ হয়ে উঠেছে। এতদিন যেসব দেশ চীনের তৈরি অস্ত্রকে ‘সস্তা কিন্তু অবিশ্বস্ত’ ভাবত, তাদের ধারণা এবার বদলে যেতে পারে।

চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার এক লাফে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে উদযাপন। কেউ কেউ এটাকে বলছে “ডিপ সিক মোমেন্ট”—যেখানে চীন তার প্রযুক্তির ক্ষমতা পুরো দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছে।

তবে সবাই এমনটা ভাবছেন না। লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক ওয়াল্টার ল্যাডউইক বলছেন, রাফাল আর জে-১০ কে তুলনা করার এখনই সময় নয়। বরং তিনি ভারতের কৌশল নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস না করে পাকিস্তানে স্ট্রাইক করাকে তিনি একদমই নিরাপদ সিদ্ধান্ত মনে করেন না।

ভারত বলছে, তারা পাকিস্তানের ১১টি বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। কিন্তু এই তথ্যের কোনো সরকারি নিশ্চয়তা নেই। ফলে গুজব, বিভ্রান্তি আর প্রশ্নে ভরে উঠেছে সংবাদমাধ্যম। বিশ্লেষকদের মতে, ভারত হয়তো সামরিকভাবে এগিয়ে ছিল, কিন্তু সঠিকভাবে তথ্য প্রকাশ না করার কারণে সেই সাফল্য ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়ে গেছে।

চার দিনের টানটান উত্তেজনার পর আন্তর্জাতিক চাপেই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে দুই দেশ। কিন্তু এই ছোট্ট যুদ্ধ ভারতের জন্য একটা বড় বার্তা—বিশেষ করে যখন দেখা যাচ্ছে, চীনের তৈরি অস্ত্র মাঠে নামিয়ে পাকিস্তান ভালোভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে।

চীন এখনো সরকারিভাবে কিছু বলেনি। কিন্তু তাদের প্রতিরক্ষা মহল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই যুদ্ধকে তারা নিজেদের ‘মনস্তাত্ত্বিক বিজয়’ হিসেবে দেখছে। এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এই যুদ্ধ কি সত্যিই শুধু ভারত-পাকিস্তানের ছিল, নাকি চীনও ছিল এর ছায়ার মতো এক অদৃশ্য অংশীদার?

বিজ্ঞাপন