কোটি টাকার প্রস্তাবেও রাজি হয়নি, অভিনেত্রী রত্না কবির!

কোটি টাকার প্রস্তাবেও রাজি হয়নি, অভিনেত্রী রত্না কবির!

বিনোদন প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি.কম
বিনোদন প্রতিবেদক, মোরনিউজবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫২ ২৭ মে ২০২৫

বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অনেক নায়িকা এসেছেন, আবার হারিয়েও গিয়েছেন। কেউ কেউ থেকে গেছেন আলোচনায়, কেউ হারিয়ে গেছেন নীরবে। তবে এমন কিছু নাম আছে, যাদের উপস্থিতি ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু প্রভাব ছিল গভীর। তেমনি একজন অভিনেত্রী রত্না কবির।

২০০২ সালে কাজী হায়াতের পরিচালনায় নির্মিত সুপারহিট ছবি ‘ইতিহাস’ দিয়ে রত্না পা রাখেন ঢালিউডে। প্রথম ছবিতেই তার বিপরীতে ছিলেন তখনকার সেনসেশন কাজী মারুফ। বড় পর্দায় জুটি হিসেবে তারা দর্শকদের হৃদয় জয় করেন অনায়াসেই। সিনেমায় অভিনয়ের গুণ এবং রত্নার ব্যক্তিত্ব খুব দ্রুতই তাকে শোবিজের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।

কিন্তু এই যাত্রাটা দীর্ঘ হয়নি। জনপ্রিয়তার শিখরে থেকেও হঠাৎ করেই অভিনয় জীবন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। তার এই আচমকা আড়াল হওয়া নিয়ে বহু প্রশ্ন থেকে গেছে দর্শকদের মনে। অনেকে ভেবেছেন—ব্যক্তিগত কোনো বিপর্যয় কি, না কি শোবিজের অন্ধকার দিক তাকে পেছনে টেনে ধরেছে?

সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ ও আবেগপূর্ণ সাক্ষাৎকারে রত্না খোলাখুলি বলেন তার জীবনের না বলা অনেক কথা। তিনি জানান, শোবিজে প্রবেশ করার পর থেকেই তাকে নানারকম প্রলোভনের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

রত্নার ভাষায়,“নায়িকা হিসেবে যখন জনপ্রিয়তা পেলাম, তখন থেকেই একের পর এক প্রস্তাব আসতে থাকে। কেউ বাড়ি দিতে চায়, কেউ গাড়ি, কেউ ঘুরতে নিয়ে যেতে চায়, কেউ চা খাওয়ার বাহানায় সময় কাটাতে চায়। এমনকি বিদেশে নিয়ে গিয়ে ‘নাশতা’ করানোর প্রস্তাবও পেয়েছি।”

তিনি বলেন,“মানুষ ভাবে—নায়িকা হলেই বুঝি সব প্রলোভনে নত হতে হয়। কিন্তু আমি সেই পথ বেছে নিইনি। আজও কেউ বলতে পারবে না যে, আমি কোনোদিন অন্যের টাকার প্রতি লোভ দেখিয়েছি। আমার চোখের সামনে অনেকেই হেরে গেছেন, কিন্তু আমি ভাঙিনি।”

এই বক্তব্য শুধু একজন অভিনেত্রীর নয়, বরং এক সংগ্রামী নারীর; যিনি নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন নিজের আত্মমর্যাদা আর নীতির কাছে। অভিনয় করতে এসেছিলেন ভালোবাসা থেকে, কিন্তু যখন দেখলেন এই ভালোবাসার পথে কাঁটা বিছানো, তখন স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন।

তিনি বলেন,“আমি হয়তো অনেক ছবিতে অভিনয় করিনি, অনেক বড় নায়িকা নই। কিন্তু আমি শান্তিতে ঘুমোতে পারি। আমি জানি, আমি কারো ওপর নির্ভর করে জীবন গড়িনি। যা করেছি, নিজের সততা দিয়ে করেছি।”

রত্নার এই স্বীকারোক্তি নিঃসন্দেহে এক সাহসী বক্তব্য। যখন অনেকেই ক্যারিয়ারের চাপে পড়ে নিজের আত্মমর্যাদাকে বিসর্জন দেন, তখন রত্না তার নীতিকে আঁকড়ে ধরেছেন। এই কারণেই হয়তো তিনি শোবিজে নিয়মিত নন, কিন্তু তার অবস্থান শ্রদ্ধার জায়গায়।

এখন তিনি আলোচনায় না থাকলেও, রত্না কবিরের গল্প তরুণ প্রজন্মের নারীদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বার্তা হতে পারে—নিজের সীমা জানো, নিজের মর্যাদা বোঝো, আর নিজের পছন্দকে শ্রদ্ধা করো। কারণ, সব নায়িকার গল্প সিনেমার মতো হয় না, কিছু গল্প বাস্তব জীবনের চেয়েও বেশি সিনেমাটিক।

বিজ্ঞাপন