শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারের দাবিতে ইবির চারুকলার শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন

শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারের দাবিতে ইবির চারুকলার শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন

অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ এবং বরাদ্দকৃত কক্ষ ব্যবহারের দাবিতে আমরণ অনশন ঘোষণা করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ৩টা থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এর আগে  তারা সকাল ৯টা থেকে একই স্থানে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর চারুকলা বিভাগকে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলায় ২৩টি ও পঞ্চম তলায় ১টি কক্ষসহ মোট ২৪টি কক্ষ বরাদ্দ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগকে পঞ্চম তলায় ১৫টি ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগকে একই তলার ১৭টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

চারুকলার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, 'প্রশাসন কর্তৃক কক্ষ বরাদ্দ পেলেও পূর্ব থেকেই অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছে ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। প্রশাসন অতিদ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েও কোনো সুরাহা না করায় গতকাল থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।'

অনশনের বিষয়ে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম বলেন, 'অনেকেই অনেকভাবে আশস্ত করলেও আমরা কোনো দৃশ্যমান ফলাফল না পেয়ে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি। আমাদের পরীক্ষা দেওয়ার মতো কোনো রুম নেই। আমাদের ক্লাসের পর ক্লাস হয়েছে বাতিল হয়েছে। বিভাগের সভাপতিকে বসতে দেওয়ার মতো রুম পাচ্ছি না। আমাদেরকে কর্তৃপক্ষ কক্ষ বরাদ্দ দিলেও অন্য ২টি বিভাগ তা দখলে রাখায় উঠতে পাচ্ছি না। এটি সমাধানের জন্য প্রশাসনের কোনো সাড়া না পেয়ে আমরা অনশনে বসেছি। আমরা আমাদের দাবি না  আদায় হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে উঠবো না।'

এ বিষয়ে চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, 'শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক। কর্তৃপক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত কক্ষে ক্লাস করার সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।'

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আতিফা কাফি বলেন, 'কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশনা দিয়েছেন তাই মেনে চলা উচিত।'

ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. আবু শিবলী ফতেহ আলী চৌধুরী বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত পঞ্চম তলার কক্ষগুলোতে  যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পরে অপেক্ষাকৃত পুরাতন বিভাগ হওয়া সত্ত্বেও কম কক্ষ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি তুলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়। তারা আমাদের কথা শুনছে না।'

কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, 'ছোট একটি সমস্যাকে বড় করে তোলা হচ্ছে। আমরা সবগুলো বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বসে কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বরাদ্দকৃত কক্ষে না গিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টির সমাধান শিক্ষকদের হাতেই রয়েছে বলে আমি মনে করি। তারা শিক্ষার্থীদের বললে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে যেতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য। উপাচার্যের নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে আমি ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতির সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলেছি। তারপরও নির্দেশ না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন কেউ যদি গায়ের জোরে নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে আমাদের করার কী থাকে, আমরা তো আর পুলিশ প্রশাসন না। আমার মনে হয়, উপাচার্যকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এসব করা হচ্ছে।'

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশে দখলদারিত্বের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে অনুষদীয় ডিন ও চারুকলা বিভাগের সভাপতির উপস্থিত হলে আমরা আলোচনার মাধ্যমে অতিদ্রুত বিষয়টি মীমাংসা করবো।’
উল্লেখ্য,  গত আগস্টে অনুষদীয় সভায় বিভাগগুলোর এসব কক্ষ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে না গিয়ে পূর্বে থেকেই ব্যবহার করা চারুকলা বিভাগের নামে বরাদ্দকৃত কক্ষসমূহ ব্যবহার অব্যাহত রাখে। পরে বিজ্ঞপ্তি আকারে নির্দেশনা এলেও দখলকৃত কক্ষগুলো ছাড়তে  নারাজ বিভাগ দুইটি। এদিকে কোনো সমাধান না হওয়ায় রবিবার সকাল ৯টায় প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন শুরু করে চারুকলা বিভাগ।
পরে বেলা সাড়ে ১২টায় চারুকলা বিভাগের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পাল্টা আন্দোলন করেছেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, 'বিগত উপাচার্যের সময় থেকেই তাঁর মৌখিক আশ্বাসে আমরা চতুর্থ তলার কক্ষগুলোতে ক্লাস করে আসছি। কিন্তু অক্টোবরের শুরুর দিকে প্রশাসন চারুকলা বিভাগের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে চতুর্থ তলায় ২৩টি কক্ষ বরাদ্দ দেন। আর আমাদের জন্য যে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। এখন চারুকলার শিক্ষার্থীরা দাবি করছে আমরা নাকি বলপ্রোয়গ করে, অন্যায়ভাবে এই কক্ষগুলো দখল করে আছি, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমাদের নাকি এ কক্ষগুলোতে ক্লাস করার অধিকার নেই। তাই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আনার জন্য আমরা এ আন্দোলন করছি। কেননা প্রশাসন চারুকলার সুযোগ-সুবিধা দেখছে অথচ এর চেয়ে পুরনো বিভাগ হয়ে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না বরং প্রতিনিয়ত আমাদের সাথে বৈষম্য করে যাচ্ছে।'

বিজ্ঞাপন