মঙ্গলবার , ০৩ জুন, ২০২৫ | ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৩১ ১ জুন ২০২৫
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। আজ রোববার (১ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর ফলে দলটি আবারও বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
রায়ে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে দলটির প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাওয়ার বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট একটি রিট মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। এই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আপিল করলেও মূল আইনজীবীর অনুপস্থিতির কারণে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ বলে আপিল খারিজ করে দেন।
পরে জামায়াতে ইসলামী খারিজ হওয়া আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর আবেদন করে। সর্বোচ্চ আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে শুনানির আদেশ দেয়। ২০২৫ সালের ১২ মার্চ শুনানি শুরু হয় এবং ১৪ মে শুনানি শেষ হয়। আজ ১ জুন আপিল বিভাগ এই বিষয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে।
আদালতে জামায়াতে ইসলামের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম। অন্যদিকে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আলী আজম।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিনসহ অনেকে।
এর আগে, ২০২৪ সালের ১ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে ২৮ আগস্ট সরকার সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে, ফলে দলটি আবারো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পায়।
এই রায়ের ফলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আইনি ও সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বহাল হলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
বিজ্ঞাপন