সামরিক শক্তির লড়াই: ভারত বনাম পাকিস্তান

সামরিক শক্তির লড়াই: ভারত বনাম পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি
অনলাইন ডেস্ক, মোরনিউজবিডি

প্রকাশিত: ০৬:২২ ২৪ এপ্রিল ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র—ভারত এবং পাকিস্তান—দীর্ঘদিন ধরেই সামরিক, কূটনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ পর্যন্ত বহুবার দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। তবে আধুনিক যুগে সামরিক প্রযুক্তি, অস্ত্রভাণ্ডার, প্রতিরক্ষা কৌশল এবং আন্তর্জাতিক জোটবদ্ধতা যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, তাতে ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক শক্তির তুলনামূলক চিত্র নতুন করে মূল্যায়নের দাবি রাখে।

এই প্রতিবেদনটি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে দুই দেশের সামরিক শক্তির তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরবে।

ভারতের সামরিক শক্তি: বিস্তৃত ও বহুমুখী
🔹 প্রতিরক্ষা বাজেট
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় ৭৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় ৬ গুণ বেশি। এটি ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় সর্ববৃহৎ প্রতিরক্ষা ব্যয়কারী দেশে পরিণত করেছে।

🔹 সেনাবাহিনী
সক্রিয় সেনা সদস্য: প্রায় ১৪ লাখ

রিজার্ভ বাহিনী: ২১ লাখের বেশি

মুখ্য অস্ত্র: T-90 ও Arjun ট্যাংক, Pinaka মাল্টি ব্যারেল রকেট সিস্টেম, BrahMos সুপারসনিক মিসাইল ইত্যাদি।

🔹 নৌবাহিনী
বিমানবাহী রণতরী: INS Vikramaditya ও INS Vikrant

পরমাণু সাবমেরিন: Arihant শ্রেণীর সাবমেরিন

মোট যুদ্ধজাহাজ: প্রায় ১৫০টির মতো

🔹 বিমান বাহিনী
যুদ্ধবিমান: SU-30MKI, Rafale, Mirage 2000

ট্রান্সপোর্ট ও হেলিকপ্টার: C-17 Globemaster, Apache, Chinook

পরমাণু ক্যাপাবিলিটি: সম্পূর্ণ ত্রিমাত্রিক স্ট্রাইক ক্ষমতা (ট্রাইএড)

পাকিস্তানের সামরিক শক্তি: দক্ষ কিন্তু সীমিত
🔹 প্রতিরক্ষা বাজেট
২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল প্রায় ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা GDP এর প্রায় ৪%। তুলনামূলকভাবে বাজেট সীমিত হলেও পাকিস্তান সামরিক কৌশলে চৌকস এবং আত্মরক্ষার মনোভাবাপন্ন।

🔹 সেনাবাহিনী
সক্রিয় সেনা সদস্য: প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার

রিজার্ভ বাহিনী: ৫ লাখের বেশি

মুখ্য অস্ত্র: Al-Khalid ট্যাংক, Nasr ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র, Ghauri ও Shaheen ব্যালিস্টিক মিসাইল

🔹 নৌবাহিনী
সাবমেরিন: Agosta 90B

বড় যুদ্ধজাহাজ: সীমিত, তবে সাম্প্রতিক চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আধুনিকীকরণ হচ্ছে

নৌ ঘাঁটি: করাচি ও গোয়াদার প্রধান ঘাঁটি

🔹 বিমান বাহিনী
যুদ্ধবিমান: JF-17 Thunder (চীন-পাক যৌথ উদ্যোগ), F-16

পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম বিমান: সীমিত হলেও কার্যকর

ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক স্ট্র্যাটেজি: ভারতের Cold Start Doctrine মোকাবেলায় প্রস্তুত

☢️ পরমাণু শক্তি
ভারত:
আনুমানিক ১৬০+ পরমাণু অস্ত্র

ট্রাইড স্ট্রাইক ক্ষমতা

No First Use (NFU) নীতিতে অটল

পাকিস্তান:
আনুমানিক ১৬৫+ পরমাণু অস্ত্র

First Use Doctrine অনুসরণ করে

ছোট পরমাণু অস্ত্র (Nasr) ব্যবহারে কৌশলী

🛰️ প্রযুক্তিগত ও সাইবার ক্ষমতা
ভারত ISRO-এর মাধ্যমে মহাকাশে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সামরিক স্যাটেলাইট, সাইবার ডিফেন্স কমান্ড এবং AI প্রযুক্তি ব্যবহারে ভারত এগিয়ে।
পাকিস্তান চীনের সহায়তায় Beidou সিস্টেম ও সাইবার প্রতিরক্ষা উন্নয়ন করছে, তবে ভারতীয় সক্ষমতার তুলনায় এখনো পিছিয়ে।

🌐 আন্তর্জাতিক জোট ও ভূ-রাজনীতি
ভারত:
QUAD (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া)

রাশিয়া ও ফ্রান্সের কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়কারী

ইসরায়েলের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা

পাকিস্তান:
চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র

তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক

OIC দেশগুলোর সমর্থন

পরিশেষে যদিও ভারত সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি, বাজেট ও আন্তর্জাতিক অবস্থানে অনেক এগিয়ে, পাকিস্তান নিজের প্রতিরক্ষা কৌশলে দারুণ পরিশীলিত এবং কৌশলগতভাবে সচেতন। তাদের পারমাণবিক First Use নীতি ও ট্যাকটিক্যাল মিসাইল ব্যবস্থা যেকোনো যুদ্ধের পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে।

তবে দুই দেশকেই বুঝতে হবে—যুদ্ধ নয়, শান্তি ও সহযোগিতাই টেকসই উন্নয়নের পথ। দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও পারস্পরিক আস্থা তৈরির মাধ্যমে উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি সম্ভব।
 

বিজ্ঞাপন