রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:১৯ ২১ মে ২০২৪
হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃত্যুর পর প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির জন্য পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছে ইরান। তবে সরকারি অনুগতরা মসজিদ ও স্কয়ারে প্রার্থনার জন্য সমবেত হলেও জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া খুব বেশি দেখা যায়নি। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে আনন্দ উদযাপন করেছেন অনেক বিরোধী।
রোববার (১৯ মে) পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এতে দেশটির প্রেসিডেন্টসহ সব আরোহী নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানও নিহত হয়েছেন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে প্রবীণ ব্যক্তিদের অতীতের মৃত্যুর তুলনায় প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া তুলনামূলক কম ছিল। সোমবার (২০ মে) থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনের জাতীয় শোকের প্রথম দিনে ইরানে বেশিরভাগ দোকান খোলা ছিল, দৈনন্দিন জীবনযাপনও ছিল স্বাভাবিক। এর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে রাইসির সরকারের ১৯৭৯ সালের পর সবচেয়ে বড় বিরোধী বিক্ষোভ দমনের এক বছর পর তার মৃত্যুতে কিছু বিরোধীদের মিষ্টি বিতরণ করার ভিডিও দেখা গেছে।
তেহরানের ২১ বছর বয়সী ছাত্রী লায়লা ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রয়টার্সকে বলেন, হিজাব প্রয়োগের বিষয়ে মহিলাদের ওপর দমন-পীড়নে ভূমিকার কারণে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে তিনি ব্যথিত নন। তবে তিনি হতাশ বোধ করছিলেন এ ভেবে যে রাইসির মৃত্যু দেশটির শাসন ব্যবস্থায় কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে না।
প্রসঙ্গত, কঠোর পোশাক কোড লঙ্ঘনের জন্য পুলিশ হেফাজতে একজন তরুণ ইরানি কুর্দি মহিলার মৃত্যুর প্রতিবাদে ২০২২-২০২৩ সালে ইরানে সংঘটিত হওয়া বিক্ষোভে সরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে কয়েকশ ইরানি মারা গিয়েছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার মানুষকে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংকট পরিচালনায় কর্তৃপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্তগুলো ইরানের ধর্মগুরু শাসক এবং সমাজের মানুষের মধ্যে ব্যবধানকে বাড়িয়ে তুলেছে। তবে প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে শোক পালন করেছে তার অনুগতরা। শিয়া শহর কোমের বাসিজ মিলিশিয়ার ২৮ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ হোসেইন জাররাবি মন্তব্য করেন, ইব্রাহিম রাইসি একজন পরিশ্রমী প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যতদিন আমরা বেঁচে আছি ততদিন তার উত্তরাধিকার থাকবে।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যু অন্যান্য ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর মতো আবেগপ্রবণতার উদ্রেক করেনি। প্রেসিডেন্ট রাইসি ছিলেন ইরানের একজন ধর্মগুরু ও শাসকদের বিরোধীদের কাছে ঘৃণ্য ব্যক্তিত্ব। ১৯৮০ এর দশকে ভিন্নমতাবলম্বীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিশ্চিত করায় সমালোচিত হয়েছেন তিনি। যদিও ইরান কখনোই এ গণহত্যার কথা স্বীকার করেনি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিপ্লবের পর প্রথম দশকে ৫ হাজারেরও বেশি ইরানিদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল।
মূলত ইরানে প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। কেউ কেউ প্রেসিডেন্টের মুত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়েছেন, আবার কেউ কেউ আনন্দ প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি কেননা তারা মনে করেন, প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু দেশের শাসনব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন আনবে না।
বিজ্ঞাপন