বৃহস্পতিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৪ পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত: ১২:৪৪ ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
মানুষের খাদ্যাভ্যাসে উদ্ভিজ্জ খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অনেকেই মনে করেন, ফলমূল বা শাকসবজির পুষ্টি আমাদের দেহের কাজে তেমন আসে না। এই ধারণা আসলে আংশিক সত্য। প্রকৃতপক্ষে, উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি আমাদের দেহের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কোষ স্বাস্থ্য এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কার্যকারিতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
টাঙ্গাইলের কুমুদিনী সরকারি কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান বলেন, উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে পাওয়া সব পুষ্টি উপাদান দেহের কাজে আসে। তবে এই পুষ্টি উপাদানগুলোকে সর্বোচ্চ কার্যকর করতে সঠিকভাবে গ্রহণ করা জরুরি।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করব, উদ্ভিজ্জ খাবারের পুষ্টি, তাদের কার্যকারিতা, অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টের প্রভাব, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।
উদ্ভিজ্জ খাবার বলতে মূলত ফল, শাকসবজি, ডাল, শিম, বাদাম, বীজ এবং মাশরুমকে বোঝানো হয়। এগুলোতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন, আঁশ এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট।
প্রোটিন মানুষের দেহের জন্য অপরিহার্য। এটি কোষ, তন্তু এবং অঙ্গগুলোর গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিজ্জ খাবারের প্রোটিন সম্পূর্ণ প্রোটিন নয়, অর্থাৎ সব অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড এতে নেই।
আঁশ মানবদেহের জন্য অপরিহার্য। প্রতিদিন পর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণ না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
উদ্ভিজ্জ খাবার বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের প্রধান উৎস।
উদ্ভিজ্জ খাবারে রয়েছে নানা ধরনের খনিজ উপাদান যেমন:
উদ্ভিজ্জ খাবারে কিছু উপাদান থাকে, যা অন্যান্য খাবারের পুষ্টি শোষণে বাধা দেয়। এগুলোকে বলা হয় অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট।
ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি পানিতে দ্রবণীয়। অতিরিক্ত রান্না করলে বা পানি ফেলে রান্না করলে এগুলো অনেকটাই হারিয়ে যায়।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত উদ্ভিজ্জ খাবার খেলে বহু দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে।
উদ্ভিজ্জ খাবার অপরিহার্য হলেও প্রাণীজ খাবারও দরকার। তবে অতিরিক্ত প্রাণীজ খাবার ক্ষতিকর হতে পারে।
সুস্থ থাকার জন্য উদ্ভিজ্জ খাবারের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে এবং প্রাণীজ খাবার সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
১. প্রতিদিন অন্তত ৫ ধরনের বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া।
২. প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাণীজ খাবার সীমিত পরিমাণে গ্রহণ।
৩. রান্নার সময় ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি রক্ষা করতে খাবার কম সময়ে হালকা করে রান্না করা।
৪. কাঁচা সালাদ, ফলমূল এবং সবজি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার অংশ হতে হবে।
৫. এক ধরনের খাবার বেশি না খাওয়া, অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টের প্রভাব কমানো।
ফলমূল ও শাকসবজি কেবল অতিরিক্ত নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অপরিহার্য। এগুলো আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায় এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কার্যকারিতা বজায় রাখে।
প্রাণীজ খাবারের সঙ্গে সঠিক ভারসাম্য রেখে উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়াই সুস্থ জীবনধারার মূল চাবিকাঠি। তাই ফলমূল, শাকসবজি, ডাল এবং সয়া পণ্যকে খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা একান্ত প্রয়োজন।
উদ্ভিজ্জ খাবারের গুরুত্ব কখনও উপেক্ষা করা উচিত নয়। এটি আমাদের সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং জীবনমান উন্নত রাখার একমাত্র নিশ্চিত উপায়।
