শনিবার , ১২ জুলাই, ২০২৫ | ২৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:৪৫ ১০ জুলাই ২০২৫
২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় ফেল করেছে রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী। এবার সারাদেশে ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে মাত্র ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। অর্থাৎ অকৃতকার্য হয়েছে ৬ লাখ ৬৬০ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৩১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর এ হার ছিল ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ হাজার ৯৭ জন কম। গতকাল শিক্ষা বোর্ডের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ফলাফল প্রকাশ করেন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. খন্দোকার এহসানুল কবির। তিনি জানান, ফলাফলে কোনো বাড়তি নম্বর বা অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়নি। পূর্ববর্তী বছরগুলোর মতো এবার নম্বর বাড়িয়ে পাস করানোর কোনো প্রবণতা ছিল না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ফলাফলের বিশ্লেষণে বোর্ডভিত্তিক পার্থক্য স্পষ্ট। সবচেয়ে ভালো ফল করেছে রাজশাহী বোর্ড, যেখানে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এরপর যশোর বোর্ডে ৭৩ দশমিক ৬৯, চট্টগ্রাম ৭২ দশমিক ০৭, কারিগরি বোর্ডে ৭৩ দশমিক ৬৩, সিলেটে ৬৮ দশমিক ৫৭, মাদরাসা বোর্ডে ৬৮ দশমিক ০৯, ঢাকা বোর্ডে ৬৭ দশমিক ৫১, দিনাজপুরে ৬৭ দশমিক ০৩, কুমিল্লায় ৬৩ দশমিক ৬ এবং সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে বরিশাল বোর্ড, যেখানে পাসের হার মাত্র ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ময়মনসিংহ বোর্ডেও পাসের হার উদ্বেগজনকভাবে কম—৫৮ দশমিক ২২ শতাংশ। বিদেশ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ৪২৭ জন শিক্ষার্থী, এর মধ্যে ৩৭৩ জন পাস করেছে, যা ৮৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এ বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯৮৪টি, যেখানে গত বছর ছিল ২৯৬৮টি। অর্থাৎ ১,৯৮৪টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাসের কৃতিত্ব হারিয়েছে। আরও ভয়াবহ হলো, এমন ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। গত বছর এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫১টি। ফলাফলে ছাত্রীদের অগ্রগতি স্পষ্ট। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫, ছেলেদের তুলনায় প্রায় ৫০ হাজার বেশি। জিপিএ ৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও মেয়েরা এগিয়ে—মেয়েরা পেয়েছে ৭৩ হাজার ৬১৬ এবং ছেলেরা ৬৫ হাজার ৪১৬ জন।
তবে এই হতাশাজনক ফলাফলের মধ্যেও কিছু প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক ভালো করেছে। যেমন—রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৮২৬ জন পাস করেছে, এর মধ্যে ৭৩৩ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাস করেছে ২ হাজার ৬১ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩২৬ জন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫৪৯ জন। নরসিংদীর কাদির মোল্লা হাই স্কুল অ্যান্ড হোমস এবং চট্টগ্রামের কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল মাদরাসাও শতভাগ পাস করেছে।
পরীক্ষার্থীদের জন্য পুনর্নিরীক্ষার সুযোগ থাকছে। ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএসের মাধ্যমে নির্ধারিত ফরম্যাটে আবেদন করা যাবে। শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এবারের ফলাফলে স্পষ্ট হয়েছে যে, অতিরিক্ত নম্বর দিয়ে ফল উন্নয়নের সংস্কৃতি কমেছে, এবং শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মূল্যায়নের প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এত বিপুল সংখ্যক ফেল নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে—বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগ, পাঠ্যক্রমের মান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে।
বিজ্ঞাপন