শুক্রবার , ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ | ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত: ০৮:৩১ ১২ নভেম্বর ২০২৫
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার এক অমানবিক বাস্তবতার নাম শাহান আলী। বয়স এখন ৩০ বছর, কিন্তু গত ২৪ বছর ধরে সে শিকলে বন্দি। ছোটবেলায় দেখা দেওয়া মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে আজও সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।
শাহান আলী উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের থাপনারগাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাহানের বয়স যখন মাত্র ছয় বছর, তখনই তার শরীরে খিঁচুনি ও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। ধীরে ধীরে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তার পর থেকেই পরিবারের সদস্যরা তাকে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়—কখনও হাত, কখনও পা, কখনও আবার পুরো শরীর শিকল ও দড়ির বাঁধনে আবদ্ধ করে রাখতে হয় ২৪ ঘণ্টা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একসময় শাহান স্কুলেও যেত। কিন্তু হঠাৎ করেই তার খিঁচুনি ও মানসিক অস্বাভাবিকতা বাড়তে থাকে। ডাক্তার দেখানো হলেও সাময়িক ওষুধের বাইরে কোনো স্থায়ী চিকিৎসা হয়নি। পরিবারটি আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেনি। ফলে বছরের পর বছর একই অবস্থায় তাকে শিকলবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।
শাহানের মা বলেন, “ছেলেটা ছোটবেলায় খুব শান্ত ছিল। হঠাৎ একদিন খিঁচুনি শুরু হয়। তারপর থেকে দিন দিন খারাপ হতে থাকে। আমরা কত ডাক্তার দেখাইছি, কত জায়গায় গেছি, কিন্তু টাকা না থাকায় আর বড় কোনো হাসপাতালে নিতে পারিনি। এখন ওকে না বাঁধলে নিজের ক্ষতি করে।”
গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা ওকে এভাবেই দেখছি। ওর বাবা-মা অনেক কষ্টে জীবন চালায়। সরকারের বা সমাজের কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়ায়, হয়তো ছেলেটা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি, শাহান আলী যেন দ্রুত উন্নত চিকিৎসা পেতে পারে সে জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের মানসিক রোগ দীর্ঘ সময় চিকিৎসা ছাড়া থাকলে রোগীর অবস্থা আরও অবনতি হয়। যথাযথ ওষুধ ও থেরাপি পেলে অনেকেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে।
দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক বলেন, “এ ধরনের রোগীর জন্য নিয়মিত চিকিৎসা, মানসিক পরামর্শ এবং পরিবারের সহায়তা প্রয়োজন। যদি তাকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া যায়, তাহলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
স্থানীয়রা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “২৪ বছর ধরে একজন মানুষকে শিকলে বেঁধে রাখা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এখনই সময় শাহান আলীকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়ার।”
দীর্ঘ দুই যুগের শিকলবন্দি জীবনের অবসান ঘটিয়ে শাহান আলীকে যদি উন্নত চিকিৎসার আওতায় আনা যায়, তবে হয়তো তার জীবনে আবারও আলোর ঝলক দেখা যাবে। মানবিক উদ্যোগ ও প্রশাসনিক সহায়তা পেলেই এই নির্যাতিত যুবকের জীবনে নতুন সূর্যোদয় সম্ভব।
