রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০১:৫০ ৩১ জুলাই ২০২৪
সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে আবির্ভূত অপ্রত্যাশিত সহিংসতা, সংঘাত আর রাষ্ট্রঘাতী পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কারফিউ জারি করা হয়। সে ক্ষেত্রে কিছু বিষয় সম্পর্কে অবশ্যই আলোচনা হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে দুটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও জরুরি প্রশ্নের উত্তরও জানা দরকার। প্রথমত, কোটা সংস্কারের দাবি যৌক্তিক এবং ন্যায্য কিনা? দ্বিতীয়ত, কেন এবং কীভাবে একটি অরাজনৈতিক ছাত্র আন্দোলন এমন সহিংস হয়ে ওঠে এবং এর দায় কার?
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে প্রথম প্রশ্নের উত্তরে সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি যৌক্তিক এবং ন্যায্য ছিল। দুটি বিষয় দ্বারা তা নিশ্চিত করা যায়। শুরু থেকেই কোটা সংস্কারের দাবির পক্ষে অবস্থান নেয় দেশের অধিকাংশ মানুষ। এ দাবি যদি যৌক্তিক ও ন্যায্য না হতো তাহলে তা কখনোই মহামান্য আদালত ও সরকার মেনে নিতেন না।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে অরাজনৈতিক আন্দোলনে নেমেছিলেন, শুরুর পর্যায়ে তার কোনো স্তরে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের দেখা মেলেনি। সেটা হওয়ারও কথা নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অপ্রত্যাশিত সেই নৈরাজ্য আর বিভীষিকা আমাদের দেখতে হয়েছে। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত কোটা সংস্কারের দাবি মেনে নেওয়া হয়। আন্দোলনের শুরুতে শিক্ষার্থীদের এ দাবিকে নানা ‘অসম্ভব’- এর ব্যারিকেডে আটকে দেওয়া হলেও, শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে সব ‘অসম্ভব’ সম্ভব হয়ে গেছে। যে প্রক্রিয়ায় এবং সংশ্লিষ্ট যাদের ভূমিকায় সেটা হয়েছে তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এ পদক্ষেপ আরও আগে কেন নেওয়া হলো না? যদি সেটা করা হতো তাহলে এ ক্ষেত্রে ‘সংঘাত’ আর ‘সহিংসতা’ শব্দ দুটো উচ্চারণের সুযোগই পেত না বাংলাদেশ। যে বা যাদের কারণে এ বিলম্ব, তারা এ সংঘাত-সহিংসতার দায় এড়াতে পারে না।
১৪ জুলাই দেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত সংবাদের একাংশ এমন– আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সরকার একটি অরাজনৈতিক আন্দোলনকে কেন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে? কোটাবিরোধী আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই।’ ঠিক এর পরদিন ১৫ জুলাই কোটা আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ! এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় অন্তত ৫০ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন। এর পর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়য়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। অনেক স্থানে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আত্মরক্ষার্থে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হন। বাড়তে থাকে সংঘাত।
১৬ জুলাই সারাদেশে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ চলে। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের অনুসারীরা। এতে নিহত হন ছয়জন। রংপুরে আন্দোলনকারী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুকে গুলি চালায় পুলিশ। সাঈদের মৃত্যু বিক্ষোভ আর আন্দোলনে উত্তাল করে তোলে গোটা দেশ।
সবশেষ, ১৮ জুলাই থেকে দেশব্যাপী যে নাশকতা, ধ্বংসযজ্ঞ আর প্রাণঘাতী সংঘাতের নজির দেখ গেল, তার দায় বর্তায় বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অনুসারীদের কাঁধে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে, জনমানুষের নিরাপত্তা এবং নাশকতা বন্ধে জারি করা হয় কারফিউ। উল্লিখিত বিষয় ও ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার বোঝা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পটভূমিতে যে সহিংস সংঘাত আর ধ্বংসের তাণ্ডব চলেছে, তাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো দায় নেই।
বিজ্ঞাপন