নড়াইলে নিবন্ধনহীন সমবায়ের নামে প্রতারণা-আস্থা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ

নড়াইলে নিবন্ধনহীন সমবায়ের নামে প্রতারণা-আস্থা সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ

শাকিল আহমেদ: নড়াইল প্রতিনিধি
শাকিল আহমেদ: নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:২২ ২৭ নভেম্বর ২০২৫

নড়াইলে ‘আস্থা সংস্থা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে নিবন্ধনবিহীন সমবায় সমিতি পরিচালনা, উচ্চ সুদে ঋণ প্রদান, গ্রাহকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষরিত চেক আদায়সহ নানা অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক স্বপন রায় ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ‘উন্নয়ন ধারা সমবায় সমিতি’ নামে কার্যক্রম চালালেও প্রতিষ্ঠানটির কোনও বৈধ নিবন্ধন নেই—যা এতদিন প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চলে।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ

ভওয়াখালী গ্রামের ভ্যান–রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম জানান, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় রেখে ১৫ শতাংশ সুদে সপ্তাহে ২,৬০০ টাকা কিস্তি ও ১০০ টাকা সাপ্তাহিক সঞ্চয়ের শর্তে ১ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন।

ঋণের মেয়াদ শেষে পুনরায় ঋণ চাইলে ম্যানেজার সুধাংশু তাঁর পাশ বই নিয়ে যান। এরপর ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তরিকুলের স্ত্রীকে কুড়িগ্রাম অফিসে ডেকে গ্যারান্টি হিসেবে দুই পাতা স্বাক্ষরিত চেক চাওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর তিনি প্রতিবাদ জানালে পরিচালক স্বপন রায় জানিয়ে দেন—চেক না দিলে ঋণ পাবেন না। জরুরি প্রয়োজনে তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও চেক জমা দেন।

পরে পাশ বই ফেরত পেয়ে দেখেন—

সুদের হার ১৫ শতাংশ নয়, ২৪ শতাংশ,

মেয়াদ ১২ মাস নয়, মাত্র ৯ মাস।

এ নিয়ে আপত্তি জানালে সংশোধনের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা করা হয়নি। কিস্তি বন্ধ করলে তাকে চেক ডিজঅনার মামলার হুমকি দেন আদায়কারী শ্যামল।

তরিকুল বলেন—
“আমি এখন বিপদে আছি—অতিরিক্ত সুদ, চাপ, আর মামলার ভয়। কোথায় গেলে বিচার পাব?”

অফিসে গিয়ে মিলল অস্বচ্ছতা

কুড়িগ্রাম আস্থা সংস্থার অফিসে গিয়ে মাঠকর্মী শ্যামলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান—স্বপন রায় প্রথমে সমবায় দপ্তরে ‘উন্নয়ন ধারা সমবায় সমিতি’র নিবন্ধন চাইলেও তা মেলেনি। “সম্ভবত সমাজসেবা থেকে নিবন্ধন থাকতে পারে”—বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যান তিনি।

ম্যানেজার সুধাংশু বাবুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান—
“আমি এখন আর ওই অফিসে চাকরি করি না। স্বপন রায়ই এখন পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করেন।”

জেলা সমবায় দপ্তর: ‘এটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান’

অভিযোগের বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে অফিসে পাওয়া না গেলে পরে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি নিশ্চিত করেন—
“নড়াইলে ‘উন্নয়ন ধারা সমবায় সমিতি’ নামে কোনও নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান নেই।”

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা জানান—
তদন্তে কুড়িগ্রাম অফিসে ‘উন্নয়ন ধারা’ নামে দুইটি পাশ বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পরিচালক স্বপন রায় দাবি করেন, এসব বই সম্পর্কে তিনি “কিছুই জানেন না”, কেউ “ষড়যন্ত্র করে রেখে গেছে।”

স্বপন রায়ের দাবি: সব অস্বীকার

ঋণগ্রহীতা তরিকুল ইসলামের সঙ্গে মুখোমুখি করেও স্বপন রায় লোন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, তরিকুলের কাছ থেকে কোনও চেক নেওয়া হয়নি।

তবে ভুক্তভোগীর দেওয়া নথি, পাশ বইয়ের অসঙ্গতি এবং বিভিন্ন সাক্ষ্যে স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা মিলছে।

পরিশেষে

স্থানীয়রা বলছেন, নিবন্ধনহীন সমবায় সমিতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ নিয়ে প্রতারণা ও হয়রানি চলতে থাকলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী।

বিজ্ঞাপন

https://moreshopbd.com/