বৃহস্পতিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রকাশিত: ০৭:০৬ ২৭ নভেম্বর ২০২৫
সাভারের প্রতিবন্ধী নারী হনুফা হত্যা মামলায় নতুন করে বেরিয়ে আসছে নেপথ্যের ভয়াবহ সব তথ্য। তদন্তে উঠে এসেছে—শুধু সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাকে। ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল পবিত্র রমজানের ২০ তারিখ তারাবির নামাজ পড়ার সময় শ্বাসরোধ করে হনুফাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
পরিবার ও মামলার নথিতে উল্লেখ রয়েছে—হনুফাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত তার আপন ভাই মোহাম্মদ আলী পাঁচু, ফারজানা, ফাহাদ, রাসেল, জয়নাল, বোন জালেমা, লতুফা, অজুফা এবং ছেলেরা কামাল, কামালের দ্বিতীয় স্ত্রী মামুন, আবুল কালামসহ কয়েকজন আত্মীয় ও এলাকার কিছু ভূমিদস্যু। হত্যার পর তারা হনুফার স্বামী হারুন অর রশিদ তুষারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। তবে ঘটনাস্থলে প্রধান খুনির শার্টের বোতাম পড়ে থাকার সূত্র ধরে পুলিশ দ্রুত এক আসামিকে আটক করে এবং তিনি ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন, যদিও বাকি আসামিরা বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে আইনের বাইরে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হত্যার পরও সম্পত্তি নিয়ে শুরু হয় জালিয়াতি। প্রথমে হত্যাকারীরা দাবি করে হনুফা কখনো বিয়ে করেননি। পরে যখন কাবিননামা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা দেওয়া হয়, তখন তারা ব্যাকডেটে একটি ভুয়া তালাকনামা তৈরি করে। তদন্তে কাজীর স্বীকারোক্তিতে জানা যায়—অন্য এক নারীকে হনুফা সাজিয়ে এনে সেই ভুয়া তালাকনামায় স্বাক্ষর করানো হয়েছিল। পিবিআই তদন্ত শেষে চার্জশিটে এ তালাকনামাকে অবৈধ প্রমাণ করেছে।
তবে এখানেই শেষ নয়—হনুফার স্বামীকে ওয়ারিশ থেকে বাদ দিয়ে খুনিরা ভুয়া তথ্য দিয়ে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট তৈরি করে। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি জানতে পেরে সেই সার্টিফিকেট বাতিল করেন। এরপরও তারা এসিল্যান্ড অফিসে টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে হনুফার নামের খারিজ করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হনুফা জীবিত থাকা অবস্থায়ও তার ওয়ারিশ সার্টিফিকেট তৈরি হয়েছিল, যা জালিয়াতির সুস্পষ্ট প্রমাণ।
এদিকে আসামিকে জেল থেকে ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে এসব খুনিরা নিয়মিতভাবে মামলার বাদী হনুফার স্বামী হারুন অর রশিদ তুষারকে হুমকি, ভয়ভীতি ও হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে তিনি বাড়িতেও যেতে পারছেন না।
ঘটনার সর্বশেষ আপডেটে জানা যায়—২৬ নভেম্বর (বুধবার) খুনিরা হনুফার খারিজকৃত জমির গাছ কেটে বিক্রি করে। বিষয়টি জানতে পেরে তুষার বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ করেন। এসআই ওহাব ঘটনাটি জেনে এএসআই জাকারিয়াকে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পুলিশ দেখে খুনি কাদির, কামাল গংরা পালিয়ে যায়।
নিরাপত্তাহীনতা ও চলমান হয়রানির মধ্যে নিহত হনুফার স্বামী হারুন অর রশিদ তুষার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন—প্রতিবন্ধী নারী হনুফার হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক এবং তাকে তার বৈধ ওয়ারিশের অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত করা না হয়।
