সোমবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ ২৮ এপ্রিল ২০২৫
কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উত্তেজনা প্রশমনের পরিবর্তে ভারত এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। একইসঙ্গে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত শতাধিক কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিদের ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। তবে এসব প্রচেষ্টা শান্তির উদ্দেশ্যে নয়; বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কূটনীতিক।
এর আগে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো ধ্বংস এবং কঠোর শাস্তি প্রদানের ঘোষণা দেন, যদিও তিনি সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি। কাশ্মীরেও নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে এবং সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে অভিযান জোরদার করেছে। এরইমধ্যে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভারত এরইমধ্যে পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানি দূতাবাসের কিছু কর্মী ও ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, বিশেষ করে কাশ্মির সীমান্তে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।
কাশ্মীরের বাইরে ভারতীয় শহরগুলোতেও মুসলিম ও কাশ্মিরিদের প্রতি বৈরী মনোভাব বেড়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কাশ্মিরি শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, হামলার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও ভারত সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম প্রকাশ করেনি বা পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার পক্ষে বড় ধরনের প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার হামলায় নিজেদের কোনও সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছে।
ভারতের কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অতীতের সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার ইতিহাস তুলে ধরেছেন এবং জানিয়েছেন, সর্বশেষ হামলার ঘটনায় কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা পাকিস্তানের সংযোগের ইঙ্গিত দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান ও সৌদি আরব উভয় দেশকেই সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখনও পরিষ্কার নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এখন পর্যন্ত ভারতে কোনও মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ না হওয়া এ ইঙ্গিত দেয় যে দক্ষিণ এশিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিচের দিকে রয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস আরও উল্লেখ করে যে, ভারতের বর্তমান কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক চাপের প্রভাব এখন অনেকটাই কম। ফলে ভারত চাইলে একতরফাভাবে পদক্ষেপ নিতেও দ্বিধা করবে না।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা:
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ২০১৬ ও ২০১৯ সালের মতো ভারত এবারও সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে পারে। তবে পাকিস্তানও পাল্টা শক্ত প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, ভারতের যে কোনও আগ্রাসনের চেয়ে আরও বড় জবাব দেওয়া হবে।
বিশ্লেষক ড্যানিয়েল মার্কি সতর্ক করে বলেন, ‘উভয় পক্ষই নিজেদের শক্তি অতিরঞ্জন করছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’
এক কূটনীতিক মন্তব্য করেছেন, "কেবল অতীতের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা ভাবার বিষয়।"
বিজ্ঞাপন