পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ, বিপাকে ভারত: ক্ষতির অঙ্ক কোটি ডলারে

পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ, বিপাকে ভারত: ক্ষতির অঙ্ক কোটি ডলারে

মোরনিউজ ডেস্ক
মোরনিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:২৫ ২৫ এপ্রিল ২০২৫

কাশ্মীর উপত্যকায় প্রাণঘাতী হামলার পর ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার জেরে পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতীয় বেসামরিক ও সামরিক বিমান চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে ভারতের বিমান পরিবহন খাতে কোটি কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।

পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ (CAA) এক নোটিশে জানিয়েছে, ২৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর এই নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। শুধু ভারতীয় রেজিস্টারভুক্ত বিমান নয়, এমনকি ভারতীয় সংস্থাগুলোর ভাড়া নেওয়া অন্যান্য দেশের বিমানের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

পাকিস্তানি মিডিয়া হাউজ এআরওয়াই নিউজ জানিয়েছে, আকাশসীমা বন্ধ থাকায় ভারতীয় বিমানগুলোকে রুট পরিবর্তন করে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে চলতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ, ক্রু ব্যবস্থাপনা ও যাত্রীসেবায় বাড়তি ব্যয় গুনতে হচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, প্রতিদিন এতে মিলিয়ন ডলার খরচ বাড়ছে।

ভারতের প্রধান বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, আদিত্য জেট, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও আকাসা এয়ার— এরা সবাই পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে থাকে। অতীতে কয়েক দিনের জন্য এই সীমাবদ্ধতা থাকায় ভারতীয় সংস্থাগুলো প্রায় ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত নয়াদিল্লি ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটগুলো সাধারণত পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছায়। এখন সেই রুট পরিবর্তনের কারণে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় বাড়ছে। এতে জ্বালানির খরচ বাড়ার পাশাপাশি, বিমানে পণ্য ও যাত্রীর পরিমাণ কমাতে হচ্ছে ভারসাম্য রক্ষার জন্য।

রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একজন ভারতীয় এভিয়েশন কর্মকর্তা জানান, “নয়াদিল্লি থেকে দুবাই বা তেহরানগামী একটি ফ্লাইটে এখন এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। এর অর্থ, আমরা একই গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি জ্বালানি ব্যবহার করছি এবং কম যাত্রী বহন করতে পারছি।”

ফ্লাইট ট্র্যাকিং সেবা ফ্লাইটঅ্যাওয়্যারের তথ্য অনুযায়ী, ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইট নয়াদিল্লি থেকে বাকু যেতে ৫ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট সময় নিয়েছে। সাধারণত এই রুটটি আরও সংক্ষিপ্ত হলেও বিমানটিকে গুজরাট, আরব সাগর ও ইরান হয়ে আজারবাইজানে যেতে হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে, অন্যদিকে এটি ভারতের এভিয়েশন খাত ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপ-ভারত ফ্লাইট করিডর দীর্ঘতর হওয়ায় ভাড়া বাড়তে বাধ্য, যার প্রভাব পড়বে যাত্রীদের উপরও। এতে ভারতীয় পর্যটন ও পণ্য পরিবহন খাতেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকরা দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা হ্রাস এবং কূটনৈতিক সমাধানের পথে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে বিরোধ যদি আরও বাড়ে, তবে তা গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকেই হুমকির মুখে ফেলবে।

বিজ্ঞাপন