বিশ্বব্যাংকের লাল তালিকায় বাংলাদেশ: দুই বছর ধরে অবস্থান অপরিবর্তিত

বিশ্বব্যাংকের লাল তালিকায় বাংলাদেশ: দুই বছর ধরে অবস্থান অপরিবর্তিত

মোরনিউজ ডেস্ক
মোরনিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬:১০ ২৮ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতির উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর লাল তালিকায় আবারও বাংলাদেশের নাম উঠে এসেছে। প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই লাল শ্রেণিতে অবস্থান করছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে প্রতি ছয় মাস অন্তর এই বিশ্লেষণ প্রকাশ করে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়। বাংলাদেশের পাশাপাশি আরো ১৪টি দেশ রয়েছে লাল শ্রেণিতে। দেশগুলো হলো: কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, ভারত, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।

বিশ্বব্যাংক খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার অনুযায়ী দেশগুলিকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। যেসব দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশ পড়েছে ‘বেগুনি শ্রেণিতে’; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি থাকলে দেশটিকে ‘লাল শ্রেণিতে’ রাখা হয়েছে। ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকলে 'হলুদ শ্রেণি' এবং ২ শতাংশের কম হলে 'সবুজ শ্রেণি'তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এবারের প্রতিবেদনে মোট ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারির পর বিশ্ববাজারে কৃষিপণ্য ও শস্যের দাম ৪ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত কমলেও, সরবরাহের সংকট ও আবহাওয়াজনিত কারণে ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে ভুট্টার দাম ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, বিশ্ববাজারে চালের চাহিদা কমে আসায় দুই বছরের মধ্যে এর দাম সর্বনিম্ন হয়েছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতির দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে আটটি দেশ। সবুজ শ্রেণিতে থাকা দেশগুলো হলো: সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরব, ম্যাকাও, চীন, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড ও বেনিন। বিপরীতে, সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে বেগুনি শ্রেণিতে আছে ছয়টি দেশ: মালাওয়ি, দক্ষিণ সুদান, হাইতি, মিয়ানমার, আর্জেন্টিনা ও তুরস্ক।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে গত এক বছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল অত্যন্ত বেশি। টানা ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে প্রথমবার খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামে এবং মার্চ মাসেও তা এক অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে এর আগে গত বছরের মার্চের পর থেকে একটানা খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে ছিল। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে পৌঁছে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জীবনে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে তেমন প্রভাব পড়ছে না, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

বিজ্ঞাপন