রবিবার , ০৪ মে, ২০২৫ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৫:০১ ৪ মে ২০২৫
দেশের প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
রোববার (৪ মে) বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার দুই সহকারী আইনজীবী শিশির মনির এবং মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন। জানা গেছে, তিনি ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে কয়েকদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি ছিলেন।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ১১ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান শেষে দেশে ফেরেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। দেশে ফিরে তিনি পুনরায় সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় সক্রিয় হন। এ উপলক্ষে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি তার জুনিয়র আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে তাকে সংবর্ধনা দেন।
২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের পক্ষে আইন লড়াইয়ের পর তিনি দেশ ছাড়েন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তিনি ‘আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি’-তে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে গত বছরের ১৭ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সেই পদ থেকেও পদত্যাগ করেন।
রাজনীতির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে দেশে ফিরে তিনি স্পষ্ট বলেন, “আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্টরুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে অবদান রাখতে চাই। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তবে রাজনীতি সফল হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে। আমি আইন অঙ্গনেই থাকব এবং দেশ ও জাতির খেদমতে নিয়োজিত থাকব।”
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্যারিস্টার রাজ্জাক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন মামলা ও যুদ্ধাপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের প্রধান আইনজীবীর দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৪৪ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। বিএ (অনার্স) ও এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার হন। লন্ডনে কয়েকবছর আইন পেশায় যুক্ত থাকার পর ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে তিনি আপিল বিভাগের আইনজীবী হন এবং ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দুই ছেলে— ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার ইমরান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী— সুপ্রিম কোর্টে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন।
বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিজ্ঞাপন