রবিবার , ০৪ মে, ২০২৫ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৪:৪৮ ৪ মে ২০২৫
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্বাধীন রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দেওয়ায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সঙ্গে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। তারা বলেছে, জামায়াতের এ ধরনের প্রস্তাব দেশটির সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
থাইল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী জানায়, গত ২৭ এপ্রিল ঢাকার গুলশানে সিপিসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর দলের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জামায়াত রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একটি সম্মানজনক ও স্থায়ী ব্যবস্থা চেয়েছি। ব্রিফিংয়ে স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্র গঠনের যে প্রস্তাবের কথা বলা হয়েছে, তা মূলত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য একটি ‘সেফ জোন’-এর ভাবনা।”
তিনি আরও বলেন, “চীন মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী একটি দেশ হওয়ায় আমরা আশা করি তারা বিষয়টি তাদের সরকারকে জানাবে এবং যথাযথ উদ্যোগ নেবে।”
তবে জামায়াতের এই প্রস্তাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, “জামায়াত ইসলামীর এই প্রস্তাব মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। রাজনৈতিক সুবিধা পেতেই দলটি চীনের সঙ্গে এমন যোগাযোগ করছে।”
বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ উল্লেখ করে জান্তা সরকার বলেছে, প্রত্যাবাসনের আগে তাদের ‘যাচাই ও নিবন্ধন’ প্রক্রিয়া চালু আছে এবং ফিরে আসা শরণার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনও প্রস্তুত।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে গড়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির — কুতুপালং। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
প্রথমদিকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সম্মত হলেও, ২০১৯ সালের প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ভেস্তে যায় রোহিঙ্গাদের আস্থাহীনতার কারণে। পরবর্তীতে ২০২১ সালে অং সান সু চি’র সরকারকে সরিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায় জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন জান্তা। এতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে পড়ে।
চীনের মধ্যস্থতায় কিছু সময়ের জন্য ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হলেও, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ায় তা কার্যকরভাবে এগোয়নি। রাখাইনে নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ায় বাংলাদেশে আবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তাব নতুন করে কূটনৈতিক উত্তেজনা তৈরি করেছে। চীন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
বিজ্ঞাপন