রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হার্শিতা সামারাউইক্রামার ও চামারি আতাপাত্তু ফিফটিতে প্রথমবার এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল শ্রীলঙ্কা।
প্রকাশিত: ০৫:৪৫ ২৯ জুলাই ২০২৪
পূজা ভাস্ত্রাকারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারলেন কাভিশা দিলহারি। বল সীমানার ওপারে পড়তেই জয়োল্লাসে মাঠে ঢুকে পড়লেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। প্রথমবার নারী এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে তখন গ্যালারিজুড়ে উচ্ছ্বাসের জোয়ার।
ডাম্বুলায় রোববার এশিয়া কাপের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতকে ৮ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১৬৬ রানের লক্ষ্য ৮ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে স্বাগতিকরা।
মেয়েদের এশিয়া কাপের নবম আসরে এসে প্রথমবার শিরোপার স্বাদ পেল শ্রীলঙ্কা। এর আগে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে চারটি ফাইনাল হেরেছে তারা। টুর্নামেন্টের সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত হারল দ্বিতীয় ফাইনাল।
এশিয়া কাপের ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। ২০১৮ সালের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষেই ১৪২ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ডও এটি। গত এপ্রিলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৫৬ রানের লক্ষ্য সফলভাবে তাড়া করেছিল চামারি আতাপাত্তুর দল।
প্রথমবার এশিয়া কাপ জয়ের ম্যাচে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আতাপাত্তু। ৪৩ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলেন লঙ্কানদের অনেক সাফল্যের নায়ক। হার্শিতা সামারাউইক্রামা ৫১ বলে করেন অপরাজিত ৬৯ রান। শেষ দিকে কাভিশা খেলেন ১৬ বলে ৩০ রানের ক্যামিও ইনিংস।
বড় রান তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খায় শ্রীলঙ্কা। অধিনায়কের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে দ্বিতীয় ওভারে রান আউট হন ভিশমি গুনারাত্নে। তবে দলের ওপর চাপ আসতে দেননি আতাপাত্তু। হার্শিতাকে নিয়ে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন অভিজ্ঞ ব্যাটার।
ষষ্ঠ ওভারে তানুজা কানওয়ারের বলে দুই ছক্কার পর একটি চার মারেন আতাপাত্তু। এরপর প্রতি ওভারেই অন্তত একটি করে বাউন্ডারি মারতে থাকেন দুই ব্যাটার। ফলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে রানের রেটের চাপ।
দশম ওভারে ক্যারিয়ারের ১২তম ফিফটি পূর্ণ করেন লঙ্কান অধিনায়ক। এক ওভার পর দিপ্তি শার্মার বলে তিনি মারেন দুটি চার। ওই ওভারেই লেগ স্টাম্পের ওপর ফুল লেংথ ডেলিভারিতে পায়ের পেছন দিয়ে বোল্ড হন ৯ চার ও ২ ছক্কার ইনিংস খেলা আতাপাত্তু।
এবারের এশিয়া কাপে দুই ফিফটি ও এক সেঞ্চুরিতে তার মোট সংগ্রহ ৩০৪ রান। টুর্নামেন্টের এক আসরে ৩০০ রান করা প্রথম ব্যাটার তিনি।
অধিনায়কের বিদায়ের পর দায়িত্ব নেন হার্শিতা ও কাভিশা। দুজন মিলে মাত্র ৪০ বলে গড়ে তোলেন ৭৩ রানের বিস্ফোরক অবিচ্ছিন্ন জুটি। ৪৩ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন হার্শিতা।
তিন ওভারে ২৫ রানের সমীকরণে রাধা ইয়াদাভের প্রথম বল ছক্কায় ওড়ান হার্শিতা। পরে আরও দুই চারে ওভার থেকে নেন ১৭ রান। ম্যাচ চলে আসে শ্রীলঙ্কার হাতের মুঠোয়। পরের ওভারে বাকি কাজ সারেন কাভিশা।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে উইকেট হারায়নি ভারত। তবে হাত খুলে খেলতেও পারেননি দুই ওপেনার। রানের গতি বাড়ানোর তাগিদে সপ্তম ওভারে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন শেফালি ভার্মা।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে মাঠ ছাড়েন ১৯ বলে ১৬ রান করা ওপেনার। তিন নম্বরে নামা উমা ছেত্রিও ফেরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর।
জেমিমা রদ্রিগেসের সঙ্গে মিলে রানের গতি বাড়ানোর দিকে মন দেন স্মৃতি মান্ধানা। ৩৪ বলে চলতি এশিয়া কাপে দ্বিতীয় ও সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারের ২৬তম ফিফটি পূর্ণ করেন বাঁহাতি ওপেনার।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাত্র ২৬ বলে আসে ৪১ রান। দুই রান নেওয়ার চেষ্টায় রানআউটে কাটা পড়েন ৩ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ বলে ২৯ রান করা জেমিমা। একই ওভারে আতাপাত্তুর দারুণ ক্যাচে বিদায়ঘণ্টা বাজে স্মৃতির।
এরপর রিচা ঘোষের ৪ চার ও ১ ছক্কায় ১৪ বলে ৩০ রানের ক্যামিও ইনিংসে দেড়শ ছাড়ানো পুঁজি পায় ভারত। কিন্তু জয়ের জন্য সেটি যথেষ্ট হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৬৫/৬ (শেফালি ১৬, স্মৃতি ৬০, উমা ৯, হারমানপ্রিত ১১, জেমিমা ২৯, রিচা ৩০, পূজা ৫*, রাধা ১*; প্রিয়াদার্শিনি ৪-০-৩১-০, প্রাবোধানি ৩-০-২৭-১, সুগান্ধিকা ৪-০-২৩-০, কাভিশা ৪-০-৩৬-২, সাচিনি ২-০-২০-১, আতাপাত্তু ৩-০-২৮-১)
শ্রীলঙ্কা: ১৮.৪ ওভারে ১৬৭/২ (গুনারাত্নে ১, আতাপাত্তু ৬১, হার্শিতা ৬৯*, কাভিশা ৩০*; রেনুকা ৩-০-২৩-০, পূজা ৩.৪-০-২৯-০, দিপ্তি ৪-০-৩০-১, তানুজা ৪-০-৩৪-০, রাধা ৪-০-৪৭-০)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে জিতে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: হার্শিতা সামারাউইক্রামা
প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট: চামারি আতাপাত্তু
বিজ্ঞাপন