রবিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৫ | ২৯ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৩:৩৪ ১৩ জুলাই ২০২৫
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজ যুক্ত হলো এক নতুন রেকর্ড। আয়ারল্যান্ডের অলরাউন্ডার কার্টিস ক্যাম্ফার গড়েছেন অবিশ্বাস্য কীর্তি—মাত্র পাঁচ বলেই পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়ে পেশাদার পুরুষ ক্রিকেটে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে নিজের নাম তুলেছেন ইতিহাসের পাতায়। এমন ঘটনাকে অনেকেই অলৌকিক বলতেই পারেন, কারণ ক্রিকেটের শত বছরের ইতিহাসেও এমন কিছু দেখা যায়নি।
ঘটনাটি ঘটেছে আয়ারল্যান্ডের ঘরোয়া ইন্টার-প্রভিন্সিয়াল টি-২০ টুর্নামেন্টে। মুন্সটার রেডসের হয়ে খেলতে নেমে নর্থ ওয়েস্ট ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ম্যাচে অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করেন ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। প্রথমে ব্যাট হাতে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান করে মুন্সটার রেডসকে ১৮৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দেন। এরপর বল হাতে নামলে ইতিহাস গড়ার গল্প শুরু হয়।
নর্থ ওয়েস্ট ওয়ারিয়র্সের ইনিংসে একসময় স্কোর ছিল ১১.৪ ওভারে ৫ উইকেটে ৮৬ রান। ম্যাচ তখনো হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের দিকে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই ক্যাম্ফার ১২তম ওভারের শেষ দুই বলে দুটি উইকেট তুলে নেন। এরপর আবার বল হাতে ফিরে এসে ১৪তম ওভারের টানা তিন বলে তুলে নেন আরও তিন উইকেট। ফলে মাত্র পাঁচ বলের ব্যবধানে পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়ে গড়ে ফেলেন এক অনন্য বিশ্বরেকর্ড।
ক্যাম্ফারের এই পাঁচ উইকেট ছিল যথাক্রমে—১২তম ওভারের পঞ্চম বলে জারেড উইলসন বোল্ড হন ইন-সুইং ডেলিভারিতে, পরের বলেই গ্রাহাম হিউম হন এলবিডব্লিউ। এরপর ১৪তম ওভারের প্রথম বলেই অ্যান্ডি ম্যাকব্রিন ক্যাচ দেন মিডউইকেটে, পরের বলেই রবি মিলার উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন এবং তৃতীয় বলে জোশ উইলসন হন বোল্ড। পুরো দৃশ্য যেন এক রুদ্ধশ্বাস নাটক!
পুরুষদের ক্রিকেটে এমন কীর্তি এই প্রথম হলেও নারীদের ক্রিকেটে এর আগে এমন এক ঘটনা ঘটেছিল। ২০২৪ সালে জিম্বাবুয়ে নারী দলের অলরাউন্ডার কেলিস নডলোভু অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট নেওয়ার নজির গড়েছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক ও পেশাদার পুরুষ ক্রিকেটে কার্টিস ক্যাম্ফারই হলেন এই বিরল কীর্তির প্রথম অধিকারী।
ম্যাচ শেষে ক্যাম্ফার বলেন, “ওভার পরিবর্তনের কারণে শুরুতে বুঝতেই পারিনি কী হচ্ছে। আমি শুধু সহজ রাখার চেষ্টা করেছিলাম। সৌভাগ্যবশত সব ঠিকঠাক হয়েছে।” তিনি আরও মজা করে বলেন, “আরেক ব্যাটার থাকলেও হয়তো ছয় বলে ছয় উইকেট নিতে পারতাম না। যেটা হয়েছে সেটাই বিশেষ।”
এই পারফরম্যান্স ক্যাম্ফারের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ তিনি সম্প্রতি আঙুলের চোট কাটিয়ে মাঠে ফিরেছেন। নিজের ফিরে আসা নিয়ে বলেন, “চোট পেলে আপনি একা হয়ে পড়েন, জিম আর পুনর্বাসনে সময়টা কঠিন। এখন দলে ফিরে, এমন পারফরম্যান্স দিতে পেরে ভালো লাগছে।”
ক্রিকেটের মতো অনিশ্চয়তাপূর্ণ খেলায় এমন ঘটনা শুধু রোমাঞ্চই নয়, ইতিহাসও সৃষ্টি করে। ক্যাম্ফারের পাঁচ বলে পাঁচ উইকেট ক্রিকেট বিশ্বকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। এক কথায়, এ ছিল এক ‘ম্যাজিক স্পেল’, যা ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বিজ্ঞাপন