রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৫:৪৭ ৭ জুলাই ২০২৪
ফুটবলের এই রণক্ষেত্রকে ভক্তরা হয়তো আজীবন মনে রাখবেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, পেপে, টনি ক্রুস, থমাস মুলাররা যেভাবে মাঠ ছেড়েছেন গত পরশু রাতে, সেটিকে মহাভারতের ভীষ্মের শরশয্যার সঙ্গে তুলনা করলেও হয়তো কম বলা হবে। পর্তুগিজ তারকা রোনালদোকে ধরে ৪১ বছর বয়সি পেপে যেভাবে কেঁদেছেন, সেটি বিশ্বের সকল ফুটবল ভক্তদের কিছু সময়ের জন্য হলেও স্তব্ধ করে দিয়েছে। কিংবা জার্মান কিংবদন্তি মুলার যে আক্ষেপ নিয়ে অশ্রু ঝরিয়েছেন, তাতে খোদ শত্রুও থমকে যেতে বাধ্য। সবই ছিল যেন ফুটবল-ঈশ্বরের ঠিক করে দেওয়া ট্রাজেডির অংশ।
এবারের ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে জার্মানি ও পর্তুগাল। সেটি গত দুদিনের পুরোনো খবর। কিন্তু এই বিদায়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে ভক্তদের হৃদয়ে, সেটি জ্যান্ত হয়ে থাকবে বহুকাল। এই বিদায়ই হয়তো রোনালদো-পেপে-মুলারদের কঠিন পথে যেতে বাধ্য করছে। তারা মুখে কিছু না বললেও অন্তত ইউরোপীয় সেরাদের এই মঞ্চে হয়তো আর দেখা যাবে না। ফিরে আসা ক্রুস তো লুকাননি কিছুই। চোখের জলে জার্মানিকে বিদায় বলে দিয়েছেন। জাতীয় দলের আগে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ভক্তদের অশ্রু সঙ্গে করে এনেছিলেন এই ফুটবল নক্ষত্র। চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের মাধ্যমে লস ব্ল্যাঙ্কোস শিবিরকেও বিদায় বলেছেন। তার আগে এমন মুহূর্ত তৈরি করেছিলেন যে, বাচ্চারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিল, ‘রেফারি তুমি শেষ বাঁশি বাজিয়ো না, তাহলে আমাদের ক্রুস আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।’ সেই ম্যাজিকম্যান নিজ দেশের মাঠ থেকে শেষটা রাঙাতে পারলেন না। আশা জাগিয়েও কেবল অশ্রুকেই সম্বল করেছেন।
শেষদিকে ফুটবলে রাজত্ব করা মুলারও নেমেছিলেন। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি। স্পেনকে সেমিফাইনালে যাওয়ার মঞ্চ অশ্রু দিয়েই তৈরি করে দিয়েছেন জার্মানরা। দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলত্জ বলেছেন, ‘তারা এই ফুটবল দিয়েই গোটা দেশকে এক করে ফেলেছিলেন। এমন মঞ্চে হেরে যাওয়াটা কষ্টের, সেই ব্যথা ভুলে যাওয়া সম্ভব না। কিন্তু পুরো দল যেভাবে ফুটবল খেলেছে তাতে কখনো মনে হয়নি তারা বিদায় নিচ্ছেন। মাথা উঁচু করে নেওয়া এমন বিদায়ও গর্বের।’ খেলা শেষে টনি ক্রুস বলেছেন, ‘আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম, সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষটা আর শেষ হলো না। এই কষ্ট হৃদয়ে থাকবে। তবে এই ফুটবলের জন্য বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাও থাকবে।’ ক্রুসের বিদায়ের দিনে অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছেন জার্মানির আরেক বিশ্বজয়ী তারকা থমাস মুলার। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘খুব সম্ভবত এটি আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।’ মুলার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে জার্মানির সঙ্গে দুই নক্ষত্রের বিদায়ও দেখল ফুটবল বিশ্ব।
স্বাগতিক জার্মানির বেদনার গল্পে নাম লিখিয়েছে পর্তুগালও। কিলিয়ান এমবাপ্পেদের ফ্রান্সের বিপক্ষে ১২০ মিনিটের লড়াই শেষ হয়েছে টাইব্রেকারে। সিআরসেভেন সেই লড়াইয়ে সফল হলেও জোয়াও ফেলিক্স ঠুকেছেন কফিনের শেষ পেরেকটা। তার শট গোলপোস্টে লেগে ফিরে আসলে পর্তুগালও শিরোপার স্বপ্ন থেকে ফিরে আসে। ফরাসিদের বিপক্ষে অতন্দ্রী প্রহরী দিয়েগো কস্তাও লিখতে পারেননি আরেকটি রূপকথার গল্প। স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে যে জাদু দেখিয়েছিলেন সেটি আর বাস্তবে রূপ নেয়নি ফ্রান্সের ম্যাচে। টাইব্রেকারের ৫টি শটই তাকে ফাঁকি দিয়ে ট্রাজেডির অলঙ্কার হয়েছে। ৪১ বছরে এসেও পেপে যেভাবে খেলেছেন সেটি গোটা বিশ্ব দেখেছে মন্ত্রমুগ্ধের মতো। এই দুই তারকাকে ইউরোর মঞ্চে আর দেখা যাবে না, এমনটি ঘোষণা না হলেও যেন ভক্তদের হৃদয়ে সেটি পৌঁছে গেছে। সারা জীবনের সাধনা দিয়ে ফুটবলকে তারা যেভাবে রাঙিয়েছেন, শেষে এসে ফুটবল রাঙালো না তাদের।
বিজ্ঞাপন