রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৩ ৩১ অক্টোবর ২০২৪
একদিকে যখন পুরো দেশ ব্যস্ত নারী দলের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা উৎসবে। অন্যদিকে, মুদ্রার বিপরীত চিত্র বাংলাদেশ ক্রিকেটে। ঢাকার ছাদখোলা বাসে মেয়েদের সেই উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা সাধারণ মানুষ, আর চট্টগ্রামে রাজ্যের বিষাদ নামিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্ত’র দল। বাংলাদেশকে রেকর্ড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস ও ২৭৩ রানের ব্যবধানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
মিরপুর টেস্টের পর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থতা দেখিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। আগের ম্যাচ হারায় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে কেবল তারা ধবলধোলাই এড়াতে পারত। আরও একবার বেহাল ব্যাটিংয়ে সেটিকে অসম্ভব প্রমাণ করেছেন শান্ত-মুশফিক ও সাদমান ইসলামরা। দুটি ইনিংসেই বাংলাদেশের তাড়না ছিল যেন কত দ্রুত ম্যাচটি শেষ করা যায়! দক্ষিণ আফ্রিকার টেল-এন্ডার ব্যাটাররাও যেখানে সেঞ্চুরি ও ফিফটি করেছে, সেখানে টাইগাররা কত দ্রুত আউট হওয়া যায় সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছিল!
তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ দুই ইনিংস মিলিয়ে ১৬ উইকেট হারিয়ে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে। তবে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে টেস্ট হার থেকে। এর আগে রেকর্ড সর্বোচ্চ ইনিংস ও ৩১০ রানের ব্যবধানে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সেটি ছিল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রাকালে। আজকের হারটি সে হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লজ্জার রেকর্ড। সেটিও সম্ভব হতো না টেল-এন্ডারে হাসান মাহমুদ ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৮ রানের ইনিংস খেলায়। দ্বিতীয় ইনিংসে স্বাগতিকরা অলআউট হয়েছে ১৪৩ রানে।
এর আগে তিন সেঞ্চুরিতে প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। বিপরীতে মাত্র ১৫৯ রানেই গুটিয়ে গিয়ে প্রথম ইনিংসে ফলো-অনে পড়ে বাংলাদেশ। গতকাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমেই তারা ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল। আজ (বৃহস্পতিবার) দলীয় সংগ্রহে আর ১২১ রান যোগ করতেই পড়ে বাকি ৬ উইকেট। এরপর ফলো-অনে পড়া বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে পাঠায় এইডেন মার্করামের প্রোটিয়া শিবির।
৪১৬ রানে পিছিয়ে থেকে ফলোঅনে পড়া বাংলাদেশের টপ অর্ডার দ্বিতীয় ইনিংসে আরো একবার ব্যর্থ। উদ্বোধনী জুটিতে দুই ওপেনার যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ১৫ রান। রানখরায় ভুগতে থাকা সাদমান ফিরেছেন মাত্র ৬ রান করে। সুবিধা করতে পারেননি আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও। ৩১ বলে ১১ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। প্রথম ইনিংসে দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা মুমিনুল হক এবার ডাক খেয়েছেন। দ্রুত ফিরেছেন জাকির হাসানও (৬)। এই টপ অর্ডার ব্যাটার দ্বিতীয় সেশনের শেষ বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়েছেন।
চা বিরতি থেকে ফিরেও একই ধারা ছিল টাইগারদের ব্যাটিংয়ে। ৪৩ রানে চার উইকেট হারানোর পর উইকেটে আসা মুশফিকুর রহিমের থেকে দায়িত্বশীল ইনিংসের প্রত্যাশা ছিল দলের। তবে মুশফিকও পারলেন না। ২ রান করে এই ব্যাটার ফিরলে ৪৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। মেহেদী হাসান মিরাজও ফেরেন মাত্র ৬ রানে। নাজমুল হোসেন শান্ত একপ্রান্ত আগলে রাখার ইঙ্গিত দিয়েও হতাশ করেন খানিক বাদেই। বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাটে আসে ৩৬ রান। শেষদিকে হারের ব্যবধান কমিয়েছেন পেসার হাসান। ৪ ছক্কায় করা তার ৩৮ রানই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশের ধবলধোলাই নিশ্চিত করার পথে প্রোটিয়াদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নিয়েছেন কেশভ মহারাজ। এ ছাড়া সেনুরান মুথশামি ৪টি এবং ড্যান পেটারসন ১ উইকেট নেন। এর আগে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া কাগিসো রাবাদা হয়েছেন সিরিজসেরা। আর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৭৭ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন প্রোটিয়া ওপেনার টনি ডি জর্জি।
বিজ্ঞাপন