বৃহস্পতিবার , ৩১ জুলাই, ২০২৫ | ১৬ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:১৬ ৩০ জুলাই ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ছয় বছর পর আবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সর্বশেষ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের সরব উপস্থিতিতে এবারের নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন।
গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ২৫ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ এবং ৯ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়স ছিল ৩০ বছর। তবে এবার এই সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষার্থী হলেই প্রার্থী হওয়া যাবে। তবে সান্ধ্যকালীন, এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট বা ভাষা কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নির্বাচন ও ভোটের জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এছাড়া ছাত্রত্ব হারিয়ে ফেলা ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইনি জটিলতা এড়াতেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আবাসিক হলের বাইরে ছয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কেন্দ্রগুলো হলো:
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ছাত্রসংগঠনগুলো প্রার্থী বাছাই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। এবার বেশিরভাগ সংগঠন দলীয় পরিচয়ের বাইরে গিয়ে “সম্মিলিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্যানেল” গঠনের চিন্তা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে যেসব শিক্ষার্থী ভূমিকা রেখেছেন, তারা নির্বাচনে এগিয়ে থাকতে পারেন। পাশাপাশি নারী, বিজ্ঞান অনুষদের, সংখ্যালঘু ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট এবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এবার ডাকসুর ২৮টি পদে নির্বাচন হবে, যার মধ্যে চারটি নতুন পদ যুক্ত হয়েছে:
আলোচনায় থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন:
ছাত্রদল দাবি করেছে, নির্বাচন তফসিল তড়িঘড়ি করে ঘোষণা করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যথাযথ আলোচনা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”
ছাত্র ইউনিয়ন বলছে, শিক্ষার্থীদের সংস্কার প্রস্তাব উপেক্ষা করে পুরনো কাঠামোতে নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার বলেন, “যারা গণহত্যায় যুক্ত ছিল, তাদের অংশগ্রহণ এই নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পারে।”
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ আহ্বায়ক আবদুল কাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নির্বাচন যেন কোনো ষড়যন্ত্রে বানচাল না হয়, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে।”
ইসলামী ছাত্রশিবির নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, সব ক্যাম্পাসেই যেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর জাবির আহমেদ বলেন, “পেশিশক্তি ও টাকার দাপট যেন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে না পারে, সে জন্য প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হবে।”
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন আশা ও নেতৃত্ব গঠনের সুযোগ তৈরি করেছে। তবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই তা ফলপ্রসূ হবে। এবারের নির্বাচন শুধু নেতৃত্ব নির্ধারণের নয়, বরং ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠতে চলেছে।
বিজ্ঞাপন