সোমবার , ১১ আগস্ট, ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৩:২১ ১৯ জুলাই ২০২৫
রাজনৈতিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ও সাত দফা দাবির প্রেক্ষিতে শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও সমাবেশের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার কথা দুপুর ২টায়, তবে ভোরের আলো ফোটার আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনস্রোতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে আসতে শুরু করেন। রাতভর বিভিন্ন পরিবহনযানে করে তারা সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান। ক্লান্তি ও ঘুমহীনতা উপেক্ষা করে সবার মুখেই ছিল আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয়ের ছাপ। কেউ এসেছেন লঞ্চে, কেউ বাসে, কেউবা ট্রাকে—কিন্তু সবাই এসেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে, নিজের খরচে, নির্দিষ্ট নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম জানান, তার জেলা ঝালকাঠি থেকে হাজারো নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছেন লঞ্চে। সকলেই নিজের খরচে এসেছেন, সংগঠনের ওপর কোনো চাপ না দিয়ে। এমনকি অনেকে অন্যদের খরচও নিজে বহন করেছেন। তারিকুল বলেন, “লঞ্চে কোনো গান-বাজনা, তাস খেলা, ধূমপান বা মাদকের ব্যবহার ছিল না। সবাই ছিল অত্যন্ত শৃঙ্খল ও সচেতন। এটা সত্যিই এক অনন্য অভিজ্ঞতা।”
একইভাবে কুমিল্লা থেকে আসা যুবক আবির রহমান জানান, তারা গতরাতে রওনা দিয়ে ফজরের আগেই সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন। সঙ্গে এনেছেন শুকনো খাবার, পানি ও জায়নামাজ। “আমরা নিজেরাই খরচ করেছি, সংগঠনের কোনো অর্থ ব্যবহার করিনি। বরং কেউ কেউ স্বেচ্ছায় ১০-২০ জনের খরচও দিয়েছেন,” বলেন আবির।
দূর উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে আসা কাউসার ইসলাম জানান, “আমাদের নির্দেশনা ছিল ফজরের নামাজের পরেই মাঠে থাকতে হবে। সে অনুযায়ী আমরা বিকেলে রওনা দিয়ে ফজরের সময় ঢাকায় পৌঁছাই। গাড়ি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে সকলে মাঠে চলে আসি।”
মহাসমাবেশে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করছেন দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা। সকাল ১০টা থেকেই শুরু হয়েছে তাদের পরিবেশনা। এছাড়া, মাঠে রয়েছে ওজু ও নামাজের ব্যবস্থা, মেডিকেল বুথ ও পর্যাপ্ত শৃঙ্খলা ব্যবস্থা। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পুরো সমাবেশ এলাকা নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, বিচার বিভাগের সংস্কারসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরবেন। বিশেষ বিষয় হচ্ছে, জামায়াত এই সমাবেশে দেশের সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, একটি সার্বজনীন ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে।
এই মহাসমাবেশ শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং একটি সামাজিক-নৈতিক বার্তা। শৃঙ্খলা, আত্মনির্ভরতা ও সহনশীলতার মধ্য দিয়ে আদর্শিক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরেছে এই আয়োজন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেন আজ সাক্ষ্য দিচ্ছে, বাংলাদেশে শৃঙ্খলিত রাজনৈতিক চর্চা এখনো সম্ভব—যদি থাকে সঠিক নেতৃত্ব, দৃঢ় মানসিকতা আর আদর্শিক অঙ্গীকার।
বিজ্ঞাপন