রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৪৯ ২৯ আগস্ট ২০২৪
আমতলীতে নির্মাণাধীন পাওয়ার গ্রীডের উপ-কেন্দ্রের শ্রমিক সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপি’র দুই পক্ষের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটেছে।এতে উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ছয় জনকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুইপক্ষের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে বুধবার রাতে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চলাভাঙ্গা এলাকায় ২০২২ সালে পাওয়ার গ্রীড বাংলাদেশের উপ-কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। শুরুতে ওই কেন্দ্রের শ্রমিক সরবরাহসহ অন্যন্যা কাজের নিয়ন্ত্রণ ছিল উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন মৃধা ও তার ভাই জহিরুল ইসলাম খোকন মৃধার হাতে। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তারা গা-ঢাকা দিলে ওই প্রকল্পের শ্রমিক সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্থানীয় মিলন মৃধা ও হুমায়ুন কবির মিল্টন মৃধা। তারা আমতলী উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত আহবায়ক জালাল উদ্দিন ফকিরের অনুসারী। শ্রমিক সরবরাহের ওই নিয়ন্ত্রণে ভাগ বসাতে চায় একই এলাকার আমিনুল ইসলাম আকন। আমিনুল ইসলাম উপজেলা বিএনপির’ সদস্য সচিব তুহিন মৃধার অনুসারী। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দেন দরবার চলছিল। গতকাল বুধবার দুপুরে এ নিয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা সমযোতা করতে খুড়িয়ার খেয়াঘাট যায় এমন দাবী আমিনুল ইসলাম আকনের। সমঝোতাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায় উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে হলদিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, হুমায়ুন কবির মিল্টন মৃধা , মিলন মৃধা ও সাংবাদিক এইচএম রাসেল আহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন সন্ধ্যা রাতে উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত আহবায়ক জালাল উদ্দিন ফকিরের ছেলে রাহাত ফকির ও তার অনুসারী শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মী আমতলী পৌর শহরের ছুরিকাটা নামক স্থানে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধার বড় ভাই আব্দুল হালিম মৃধার দোকান ভাংচুর করে। এতে বাঁধা দেয়ায় তারা হালিম মৃধাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে রক্ষায় স্থানীয় কবির খাঁন ও মিজানুর রহমান তালুকদার এগিয়ে গেলে তাদের কুপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা তার অনুসারীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আবুল কালাম, মুছা মিয়া, মিলন, ইউসুফ মিয়া ও মিরাজ সরদারসহ ১৫ জন আহত হয়। গুরুতর আহত আব্দুল হালিম মৃধা, কবির খাঁন, মুছা, আবুল কালাম, মিরাজ ও মিজানুর রহমানকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি মামলা হয়েছে। জালাল ফকিরের অনুসারী হুমায়ুন কবির মিন্টন মৃধা বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধাকে প্রধান আসামী করে পাঁচজনের নামে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঁদাবাজী মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের বিচারক মোঃ আরিফুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে আমতলী থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন। অপর দিকে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত আহবায়ক জালাল উদ্দিন ফকিরকে প্রধান আসামী করে তার ভাইকে হত্যা চেষ্টা ও দোকান লুটের অভিযোগ এনে ২৬ জনের বিরুদ্ধে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
পাওয়ার গ্রীড উপ-কেন্দ্রের শ্রমিক হুমায়ুন কবির মিল্টন মৃধা বলেন, আমার কাছে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা, সামসুল হক চৌকিদার ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। ওই টাকা না দেয়ায় আমাকে বেধরক মারধর করেছে। আমি এ ঘটনায় তুহিন মৃধাকে প্রধান আসামী করে পাঁচজনের নামে মামলা করেছি।
আহত কবির খাঁন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আব্দুল হালিম মৃধাকে কুপিয়ে জখম করতে দেখে আমি তাকে রক্ষায় এগিয়ে যাই। তখন তারা আমাকেও কুপিয়েছে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছি।
আমতলী উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত আহবায়ক জালাল উদ্দিন ফকির বলেন,উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধা ও সামসুল হক চৌকিদার তাদের অর্ধশতাধিক অনুসারী নিয়ে খুরিয়ার খেয়াঘাটে পাওয়ার গ্রীডের শ্রমিক মিল্টনের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দেয়ার তারা তাকে বেধরক মারধর করেছে। তবে তিনি তার ছেলের নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব তুহিন মৃধার ভাইকে কুপিয়ে জখমের কথা অস্বীকার করেছেন।
আমতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ তুহিন মৃধা চাঁদা দাবীর কথা অস্বীকার করে বলেন, জালাল ফকিরের ছেলে রাহাত ফকিরের নেতৃত্বে তার শতাধিক অনুসারী আমার ভাইয়ের দোকান ভাংচুর, লুটপাট এবং তাকে কুপিয়ে জখম করেছে। আমার ভাইকে রক্ষায় কবির খাঁন, মুছা, আবুল কালাম ও মিজানুর রহমান এগিয়ে আসলে তাদেরও তারা কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে জালাল ফকিরকে প্রধান আসামী করে ২৬ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছি।
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। মামলা প্রক্রিয়াধীন।
বিজ্ঞাপন