রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৬:৪৪ ১১ জুলাই ২০২৪
কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারে আবারও শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ । বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভোর রাত ৩টা হতে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ভারী বর্ষণে পুরো পর্যটন শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে বাসাবাড়িতে। এছাড়া বৃষ্টির তীব্রতায় পাহাড় ধসে নারী ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পৃথক এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী।
নিহতরা হলেন, শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এবিসি ঘোনার দক্ষিণ পল্লানিয়াকাটা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা বেগম (৩০) ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকার সাইফুলের ছেলে নাজমুল হাসান (৬)।
মেয়র মাহবুবুর রহমান স্থানীয়দের বরাতে জানান, বুধবার (১০ জুলাই) রাতে থেমে থেমে হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। তবে রাত ৩টা থেকে শুরু হয় টানা ভারী বর্ষণ। প্রায় ৪ ঘণ্টা চলে এ বৃষ্টি। টানা বর্ষণে পর্যটন জোনসহ পৌরসভার প্রায় এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনাও। সকাল ৭টার দিকে মাঝারি আকারে রূপ নেয় বৃষ্টি।
নিহত জমিলার স্বামী করিমের বরাতে স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর বলেন, দক্ষিণ পল্লানিয়াকাটায় বসতঘরে সবাই নাস্তার আয়োজন করছিলেন। এ সময় আচমকা পাহাড়ের মাটি বসত ঘরে পড়লে চাপা পড়ে গৃহবধূ জমিলা। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, সিকদার বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে ঘরের মাটির দেয়ালসহ আসবাবপত্র শিশু হাসানের গায়ে পড়ে। তাকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বক্তব্য জানতে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ছিদ্দিক লালু ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর টিপুকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও কেউ কল রিসিভ করেননি।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মুহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, মাটিচাপায় জখম পাওয়া দুজনের মধ্যে শিশু নাজমুলকে সকাল পৌঁনে ৮টা ও নারী জমিলাকে পৌঁনে নয়টায় হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তারা মারা যান। দেয়াল চাপায় শিশু নাজমুলের মাথা থেঁতলে যায়। লাশগুলো মর্গে রয়েছে বলে জানান তিনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানান, কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ চলছে। বৃহস্পতিবার ভোর রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোর রাত ৩টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৮৫ মিমি আর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৯৪ মিমি বৃষ্টিপাত হয়। থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পর্যটন জোনের ব্যবসায়ী ওবায়দুল হোসেন ও মুহাম্মদ আয়াছ জানান, কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে কলাতলীর পর্যটন জোনের প্রধান সড়কসহ উপসড়কগুলো হাটু পানিতে তলিয়ে যায়। পানি ঢুকেছে অনেক দোকান, অফিস ও বাসায়।
টেকপাড়ার বাসিন্দা আজিজ রাসেল জানান, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে পুরো টেকপাড়া, চাউলবাজার, বড় বাজার, পেশকারপাড়ার আশপাশ তলিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার ওপরে হাটু পরিমাণ পানি। এছাড়া শহরের প্রধান সড়কও তলিয়েছে । নালার ওপর স্থাপনা করায় পানি চলাচল পথ সংকোচিত করায় নিষ্কাশনে বাধা পেয়ে পানি বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে। এতে দামি আসবাবসহ বাড়ির সব কিছু পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাসিন্দারা।
পানিবন্দি হয়ে আছে লাইটহাউজ এলাকার বাসাবাড়ির লোকজনও। এমনটি জানিয়েছেন পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত সোহেল আরমানসহ অনেকে।
কক্সবাজার শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আলমগীর জানান, পাহাড় ধসে দুজনের মৃত্যুর কথা শুনেছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। বৃষ্টির তোড়ে ফাঁড়ি ভবনের নিচতলা তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে অফিসকক্ষসহ প্রয়োজনীয় সব স্থানে। ডুবেছে রাস্তাঘাট।
বিজ্ঞাপন