রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৭:৩১ ২ ডিসেম্বর ২০২৪
"গত ১৫ বছরে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তার পরিমাণ শুধু বড় নয়—তা ভয়াবহ। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ১৩.৪ লাখ কোটি টাকা বিদেশে গেছে। চিন্তা করুন, এই টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে চারটি মেট্রোরেল লাইন তৈরি করা যেত। অথচ আমরা কী দেখছি? প্রবাসী শ্রমিকরা ন্যায্য বেতনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত।"
রবিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং অর্থনীতিতে দুর্নীতি তদন্তে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
ব্যাংক খাতের অনিয়ম বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল স্পষ্ট । আর এই প্রভাব ব্যাংকিং খাতের সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এতে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে যে পরিমাণ ঋণ মন্দ বা বিপর্যস্ত হয়েছে, তা ১৪টি ঢাকা মেট্রো সিস্টেম অথবা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণের খরচের সমান। ক্রমাগত ঋণখেলাপি ও হাই প্রোফাইল কেলেঙ্কারি আর্থিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে এবং মূলধনকে উৎপাদনশীল খাত থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। নামে-বেনামে ঋণ বের করা, বিদেশে অর্থ পাচারসহ কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ফলে ব্যাংক খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নেমে গেছে শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে, এখন যার চরম মূল্য দিচ্ছে ব্যাংকসহ পুরো দেশ।
প্রতিবেদন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরা দেশের আর্থিক খাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। সামনে খেলাপি ঋণ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে, ব্যাংকিং খাতের স্বাস্থ্য চরম সংকটে। খেলাপি ঋণের হার এখন ১২.৫ শতাংশ, যা মাসের ব্যবধানে ১৫ শতাংশে পৌঁছাবে। আমরা আশঙ্কা করছি, এটি ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এসব ঋণের অর্ধেকই এস আলম বা সাইফুজ্জামানের মতো বড় গ্রুপগুলোর। ২০১৭ সালের পর থেকে এ প্রবণতা বেড়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পাচার করা হয়।"
শ্বেতপত্র হস্তান্তরকালে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ প্রমুখ।
বিজ্ঞাপন