বৃহস্পতিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২৫ | ৩০ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৬:৪১ ১৪ আগস্ট ২০২৫
দক্ষিণ ইউরোপজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের সঙ্গে দাবানল পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গ্রিস, স্পেন, তুরস্ক ও আলবেনিয়ায় দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় গ্রিসে ১৫২টির বেশি নতুন দাবানলের সূত্রপাত হয়েছে। দেশের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের চার হাজার ৮৫০ জন কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, এবং হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দাবানলের কারণে স্পেন, আলবেনিয়া ও তুরস্কে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ধোঁয়া ও আগুনে আহত আরও অনেক মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলতি সপ্তাহের শুরুতে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। ফ্রান্স ও স্লোভেনিয়ায় রেকর্ড তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে।
গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ কিয়স ও জাকিনথোস থেকে হাজার হাজার পর্যটককে সরানো হয়েছে। পশ্চিম পেলোপনিসে আগুন রাতারাতি পাত্রাস শহরে ঢুকে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহন ধ্বংস করেছে। জান্তে দ্বীপে ১৫ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত তিনটি পৃথক দাবানল এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এতে বসতবাড়ি, পর্যটন অবকাঠামো ও কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
গ্রিসের ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র ভাসিলিস ভাথ্রাকোগিয়ানিস জানিয়েছেন, অগ্নিনির্বাপণ দলের অন্তত ১৫ সদস্য দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে। কিয়স দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটককে নৌকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অতিরিক্ত অগ্নিনির্বাপণ বিমান আহ্বান করা হয়েছে।
স্পেনের লিওন প্রদেশে ৪ হাজারের বেশি মানুষকে সরানো হয়েছে। একই এলাকায় একজন স্বেচ্ছাসেবক অগ্নিনির্বাপণ কর্মী মারা গেছেন। মাদ্রিদের কাছে ত্রেস কান্তোসে এক অশ্বক্রীড়া কেন্দ্রের কর্মী মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সেখানে ঘণ্টায় ৭০ কিমি বেগে বাতাস বইছে, যা আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দিচ্ছে। স্পেনের সরকার জাতীয় জরুরি কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে।
আলবেনিয়া, ফ্রান্স, পর্তুগাল, ইতালি ও বলকান অঞ্চলের দেশগুলিতে তাপপ্রবাহ ও দাবানল নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইতালিতে একটি গাড়ির মধ্যে চার বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, হিটস্ট্রোকের কারণে তার মস্তিষ্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফ্রান্সে দ্বিতীয়বারের তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে, এবং হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে। মন্টেনেগ্রোর পডগরিকার উত্তরের পাহাড়ি এলাকায় একটি পানিবাহী ট্যাংকার উল্টে গিয়ে এক সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। পর্তুগালে তিনটি বড় দাবানলের সঙ্গে লড়াই চলছে।
তুরস্কের চানাক্কালে ও ইজমিরের কিছু দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও কয়েক শত মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যের কিছু এলাকায় চতুর্থবারের তাপপ্রবাহ চলছে। লন্ডনের দুটি স্থানে দাবানলের কারণে ১৭ একরের বেশি এলাকা পুড়ে গেছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম আরও গরম ও শুষ্ক হয়ে উঠছে, যা দাবানল মৌসুমকে দীর্ঘ ও তীব্র করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি
বিজ্ঞাপন