শনিবার , ০২ আগস্ট, ২০২৫ | ১৭ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৫:০৯ ৩১ জুলাই ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। মার্কিন নৌবাহিনীর লেমুর নেভাল এয়ার স্টেশনের (NAS Lemoore) নিকটবর্তী এলাকায় বিমানটি ভেঙে পড়ে। তবে পাইলট সফলভাবে ইজেক্ট করে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে এফ-৩৫সি মডেলের একটি যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ মিশনের অংশ হিসেবে উড্ডয়নের পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি স্টেশনের আশপাশের একটি খোলা এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। পাইলট দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বিমান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান।
নেভাল এয়ার স্টেশন লেমুর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “পাইলট সুরক্ষিতভাবে ইজেক্ট করতে পেরেছেন এবং তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় বেসামরিক কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।”
বিধ্বস্ত হওয়া যুদ্ধবিমানটি এফ-৩৫ সিরিজের ‘সি’ মডেল, যা বিশেষভাবে বিমানবাহী জাহাজ থেকে পরিচালনার উপযোগী করে তৈরি। এটি স্টিলথ প্রযুক্তি, উচ্চগতি এবং উন্নত অস্ত্রসজ্জার জন্য পরিচিত। প্রতিটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের মূল্য ৮০ থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে, যা একে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ও উন্নত যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত করে।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বর্তমানে মার্কিন বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী এবং মেরিন কোরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বিমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো — এটি রাডারে ধরা পড়ে না এবং এটি মাটির ওপর থেকে বা আকাশে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।
এ দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও জানা যায়নি। মার্কিন নৌবাহিনী জানিয়েছে, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বিমান বিধ্বস্তের কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ দল ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।
বিমানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এখনো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত এ ধরনের দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারিগরি সহায়তা ও তথ্য সরবরাহ করে।
গত কয়েক বছরে এফ-৩৫ সিরিজের একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার পেছনে কখনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি, আবার কখনো মানবিক ভুলকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার পর পরবর্তী সংস্করণে উন্নয়ন আনা হয়েছে বলে দাবি করে লকহিড মার্টিন।
এই সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, প্রযুক্তির পাশাপাশি নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়েও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। পাইলটের জীবন রক্ষা পেলেও, যুক্তরাষ্ট্রের মতো সামরিক পরাশক্তির জন্য এ ধরনের একটি উন্নত ও ব্যয়বহুল বিমান হারানো নিঃসন্দেহে একটি বড় সতর্কবার্তা বহন করছে।
বিজ্ঞাপন