রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:০৩ ২৩ নভেম্বর ২০২৪
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আফগান মেয়েরা নানা ধরনের শিক্ষা ও স্বাধীনতার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর, সরকারের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা, বিশেষত নারী শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা, দেশটির নারী ও কিশোরী শিক্ষার্থীদের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
সালিহা (ছদ্মনাম) একজন ১৮ বছর বয়সী তরুণী, যার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তালেবান সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর, তার শিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে, তিনি হার মানেননি। নিরাপত্তার কারণে তার পরিচয় গোপন রাখা হলেও, তিনি জানান, অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের জন্য নিজের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি কম্পিউটার কিনতে এবং ইন্টারনেটের খরচ মেটাতে একে একে পয়সা জমাচ্ছি।’’
এ ধরনের সংকট শুধু সালিহার ক্ষেত্রে নয়, পুরো আফগানিস্তানে প্রায় ১৪ লাখ মেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাও, এমন পরিস্থিতির মধ্যে কিছু আফগান নারী ও কিশোরীরা গোপনে বা অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ খুঁজছে। তবে, সমস্যাটি আরও জটিল। ২০২২ সালে আফগানিস্তানে মাত্র ৬% নারী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছিলেন, যা পুরুষদের তুলনায় অনেক কম।
এ পরিস্থিতিতে, ‘লার্ন আফগানিস্তান’ নামের একটি ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলেন পাশতানা দুররানি, যিনি আফগান মেয়েদের জন্য নমনীয় শিক্ষার মডেল তৈরি করেছেন। তার সংগঠন শুধুমাত্র অনলাইনে শিক্ষা প্রদান করে না, পাশাপাশি ছয়টি প্রদেশে গোপন বিদ্যালয়ও পরিচালনা করে, যেখানে প্রায় ৭০০ মেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করছে। দুররানি বলেন, “শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে যাতে এটি স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও নমনীয় হয়।”
নারী শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান 'সাহার এডুকেশন' এর নির্বাহী পরিচালক মিত্রা আলোকোজায়ও আফগান পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সহায়তা কামনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই পরিবর্তনে নারীদের সহায়তা করার জন্য পুরুষদের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তবে, তালেবান সরকারের নিষেধাজ্ঞার ফলে আফগানিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। ইউনেস্কো প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে আফগানিস্তানে ৬৮ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ছিল, যা ২০২২ সালে কমে ৫৭ লক্ষে পৌঁছেছে।
এ ছাড়াও, আফগানিস্তানে মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্যও অবনতির দিকে যাচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানাচ্ছে যে, নারীদের শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি পাচ্ছে সহিংসতা, এবং এর ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গেছে।
সালিহা ও অন্যান্য আফগান মেয়েরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ করেছেন যে, তাদের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হোক এবং আফগান মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ দিতে সাহায্য করুন। সালিহা বলেন, “যদি একটি দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমাদের অন্যটি খোলার সুযোগ দিন, আমাদের একা ছেড়ে দেবেন না।”
আফগানিস্তানে নারীর শিক্ষার অধিকার রক্ষা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
বিজ্ঞাপন