রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০৮ ২২ মে ২০২৪
মৃত ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাকৃত রাখা টাকা নমিনি পাবেন নাকি উত্তরাধিকারী– এ নিয়ে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন একাধিক মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি দীর্ঘদিনেও। এ নিয়ে হাইকোর্টের রায় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বৈপরীত্য থাকায় অনেকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) অনুযায়ী, হিসাবধারী অথবা আমানত জমাকারী মৃত্যুবরণ করলে গচ্ছিত টাকা পাবেন নমিনি। তবে সঞ্চয়পত্রের নমিনি নিয়ে ২০১৬ সালে এক রায়ে ভিন্নমত দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে বলা হয়, সঞ্চয়পত্রের হিসাবধারী মারা গেলে ওই টাকা নমিনির (মনোনীত ব্যক্তির) পরিবর্তে ব্যক্তির উত্তরাধিকারী পাবেন। এ নিয়ে উচ্চ আদালত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বৈত সিদ্ধান্ত থাকায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি এখনও সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির জন্য ঝুলে আছে। এ ধরনের বেশ কিছু মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকলেও তার সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, আইনগতভাবে ব্যাংকে হিসাবধারী বা আমানত জমাকারী মৃত্যুবরণ করলে তাঁর গচ্ছিত টাকা নমিনি পাবেন, এটাই রীতি।
আট বছর আগে হাইকোর্টের রায়ে আরও বলা হয়, নমিনি হবেন একজন ট্রাস্টি। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী নমিনি টাকা উত্তোলন করে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সমভাবে বণ্টন করে দেবেন।
তবে এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা নমিনির কাছেই হস্তান্তর করতে হবে। তবে এতে সেই টাকার মালিকানার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে এর বিরুদ্ধে আপিল (লিভ টু আপিল) আবেদন করে বিবাদীপক্ষ। এখন পর্যন্ত এর শুনানি হয়নি।
ওই মামলার বাদীপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী ও আইনজীবী নাজনীন নাহার। নাজনীন নাহার জানান, আপিল বিভাগে রায়টা নিষ্পত্তি না হওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। কোথাও কোথাও মনগড়াভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে অনেকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সর্বোচ্চ আদালতে জনস্বার্থে রায়টা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া খুবই প্রয়োজন। এতে সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ পাবেন।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। আশা করছি, এর ফলে জমে থাকা পুরোনো মামলাগুলো পর্যায়ক্রমে নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
ব্যাংকে হিসাব খোলার সময় বাধ্যতামূলকভাবে নমিনির নাম উল্লেখ করতে হয়। আমানতদারের অবর্তমানে কিংবা তাঁর মৃত্যুর পর গচ্ছিত অর্থসম্পদ ব্যাংক থেকে উত্তোলনের সুবিধার্থে নমিনি করে রাখা হয়। এই নমিনি হতে পারেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, স্ত্রী, স্বামী, ভাইবোনসহ বিশ্বস্ত যে কেউ। অভিযোগ আছে, অনেক সময় নমিনি উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে মৃত ব্যক্তির টাকা বা মূল্যবান জিনিস ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নিজেই আত্মসাৎ করেন।
এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, অনেক দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে তারা উভয় সংকটে রয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তারা।
বিজ্ঞাপন