বৃহস্পতিবার , ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ২০ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:৫০ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজ ৩ সেপ্টেম্বর বাংলা চলচ্চিত্রের রোমান্টিক কিংবদন্তি উত্তম কুমারের জন্মদিন। প্রকৃত নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। চলচ্চিত্রের পর্দায় রোম্যান্সের জন্য যে তারকা আজও চিরস্মরণীয়, তার ব্যক্তিজীবনেও ছিল এক অনবদ্য প্রেমের কাহিনি। উত্তমকুমারের ভালোবাসা এবং গৌরী দেবীর সঙ্গে সম্পর্কের গল্প আজও সমান উত্তেজনা আর কোমলতায় ভরা।
সেই সময় উত্তমকুমার এখনও সিনেমার কিংবদন্তি হয়ে ওঠেননি। জীবনের সঙ্গী ছিল উপেক্ষা, অবহেলা এবং বেকারত্ব। অভিনয়ের নেশা আর গানই ছিল তার মূল অবলম্বন। প্রথম চাকরি পান পোর্ট কমিশনার্স অফিসের ক্যাশ ডিপার্টমেন্টে। যদিও অফিসে ব্যস্ততা কম, বাকি সময় তিনি কাটাতেন অভিনয়ের স্বপ্নে মগ্ন হয়ে।
একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি প্রথমবার দেখেন এক সুশ্রী মেয়েকে—যার হাসি মুগ্ধ করেছিল তাকে। অন্নপূর্ণার সঙ্গে দেখা সেই মেয়েটির নাম জানতে পারে উত্তম, “গৌরী রানী গাঙ্গুলী।” অভিজাত পরিবারের এই মেয়ের প্রেমে পড়ে যাওয়া সহজ ছিল না, তবু উত্তমকুমারের মন বাধা মানেনি।
প্রথমে গৌরীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে গিয়ে তিনি হারমোনিয়ামে বসে গান গাইতে শুরু করেন। তবে প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কেবল কিছুদিন পর, গৌরী নিজের আগ্রহ দেখিয়ে অন্নপূর্ণার মাধ্যমে উত্তমের কাছে পৌঁছে যান। এভাবেই শুরু হয় তাদের মন-মিলনের ধাপে ধাপে গল্প।
ভালোবাসার এই সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। সিনেমায় নামার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ও উত্তমকুমার প্রথমে গৌরীর মতামত জিজ্ঞেস করেন। গৌরী হাসিমাখা মুখে উত্তরে বলেন, “তুমি সিনেমায় নামলে আমি আরও খুশি হব।”
কিন্তু প্রেম কখনোই সহজ ছিল না। ‘দৃষ্টিদান’ সিনেমা দেখার সময়ে গৌরীকে তার দাদী সঙ্গে নিয়ে গেলে উত্তমকুমারের প্রতি গৌরীর ভালোবাসা প্রকাশিত হয়, যা দাদীকে অবাক করে তোলে। এর ফলে বাড়িতে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, কিন্তু ভালোবাসা শেষ হয় না।
শেষ পর্যন্ত, গৌরীর বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও তিনি রাজি না হওয়ায় উত্তমকুমার সমস্ত দ্বিধা ভেঙে গৌরীর বাড়িতে ছুটে যান। গৌরীও তাঁর হাত ধরে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। বহু বাগ্বিতণ্ডা শেষে গৌরীর বাবা রাজি হন, এবং স্বপ্ন সত্যি হয়—উত্তমকুমার ও গৌরী দেবী অবশেষে এক হয়ে যান।
এই কাহিনি শুধু রোম্যান্সের নয়, বরং ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং সত্যিকারের ভালোবাসার প্রমাণ। আজও বাংলা চলচ্চিত্রের রোমান্টিক নায়ক উত্তমকুমারের জন্মদিনে এই গল্প হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন