রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৮ ৩ আগস্ট ২০২৪
ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতার সময় গুলিতে নিহত মারুফ হোসেন খোকসা পৌর এলাকার থানাপাড়ার শরিফ উদ্দিনের একমাত্র ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক্যাল কলেজের ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্সের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। একমাত্র ছেলের মৃত্যু সংবাদ আসার পর একবারই চিৎকার করে কেঁদে উঠেছিলেন মা ময়না খাতুন। এরপর বুকে পাথরচাপা দিয়েছেন। কোনো প্রশ্নের জবাব দেন না। কেউ কথা বললে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। ছেলের থাকার ঘরে স্মৃতি হাতড়ে তাকিয়ে থাকেন। ঘর তালা দিয়ে চাবিটা নিজের কাছে রেখেছেন। ইচ্ছে হলে ওই রুমে গিয়ে টেবিলের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন। ছেলের ব্যবহারের বাইসাইকেলটি চেয়ে চেয়ে দেখেন। মায়ের সঙ্গে ভাইয়ের হাতের স্পর্শ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে একমাত্র ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মাইসা।
মারুফের বাবা কাঁচামালের আড়তের শ্রমিক ও ফুটপাতের খণ্ডকালীন পেয়ারা বিক্রেতা শরিফ উদ্দিন কাজে যান না। শরীরও খারাপ। হার্টের সমস্যা। প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগে।
চাকরির সন্ধানে ২০ দিন আগে রাজধানী ঢাকায় যান। বন্ধুদের সঙ্গে বনশ্রী এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। ১৯ জুলাই দুপুরে সেই বাসার সামনে মারুফ গুলিবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরদিন ২০ জুলাই সকালে গ্রামের বাড়ি খোকসার থানাপাড়ায় তার মৃতদেহ আনা হলে শোকের মাতম শুরু হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই কেন্দ্রীয় পৌর ঈদগাহে জানাজা শেষে পৌর কবরস্থানে মারুফকে দাফন করা হয়। দাফনের সময় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে খোকসা থানার ওসি আননূর যায়েদ উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় মসজিদে মারুফের কুলখানি করেন শরিফ হোসেন।
শরিফ হোসেন বলেন, ‘১৯ তারিখ বেলা ১১টার দিকে ছেলের সঙ্গে শেষবার কথা হয়। তখনো তাদের মেসে খাবার হয়নি। বিকাল ৫টার পর ছেলের সহপাঠী তাকে ফোন দিয়ে মারুফের মৃত্যুর খবর জানায়। তিনি আরও জানান, টাকার অভাবে সংসার আর চলছে না। আমার শরীরও খারাপ। ছেলেকে হারিয়েছি, সরকারের কাছে কী চাইব। আমার চাওয়া-পাওয়ার আর কিছুই নেই। অশ্রুসিক্তে কথা বলে নির্বাক হয়ে তাকান শরিফ। ছেলে হত্যার বিচার চান তিনি।
বিজ্ঞাপন