রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ বাঘ দিবস
প্রকাশিত: ০৬:০৮ ২৯ জুলাই ২০২৪
সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে শেষ হয়েছে বাঘ গণনা। প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ জরিপে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির আভাস মিলেছে। ২৯ জুলাই (সোমবার) বাঘ দিবসে তৃতীয় বাঘ জরিপের ফল ঘোষণার কথা থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর সুরক্ষা, প্রজনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যা বাড়াতেও কাজ করতে হবে বন বিভাগকে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ। সুন্দরবনের ভারসাম্য ধরে রাখতে সবার উপরে তাদের ভূমিকা। সুন্দরবন ভ্রমণে এখন অনেক পর্যটকের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে বাঘের ছবি।
চোরা শিকারি, বনদস্যুদের দাপট, অভয়ারণ্যে অবাধ যাতায়াত, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে গত কয়েক দশকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমছিল। কমছিল বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যাও। সবশেষ ২০২৮ সালে বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪টি বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায়।
এরপর অভয়ারণ্য বাড়ানো এবং সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করাসহ নানা উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। যার সুফলও মিলতে শুরু করেছে। এরইমধ্যে বাঘের প্রজনন, নিরাপত্তা ও সংখ্যা বৃদ্ধিতে সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০২২ সালে তৃতীয়বারের মতো সুন্দরবনের বাঘ গণনা শুরু হয় যা চলে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট রেঞ্জের ৬৩৯টি গ্রিডে ক্যামেরা বসিয়ে সংগ্রহ করা হয় ছবি। এসব ছবির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে নিয়ে এখন চলছে বিশ্লেষণ।
বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর সাড়ে ১০ লাখেরও বেশি ছবি পাওয়া যায়। এরমধ্য থেকে সাড়ে ৭ হাজার বাঘের ছবি নিয়ে চলে বিশ্লেষণ, যা শেষ হয়েছে ৭ জুলাই। এই সাড়ে সাত হাজার বাঘের ছবি থেকে ইউনিক বাঘের ছবি নির্ধারণ করতে এখন চলছে বিশ্লেষণ।
গবেষণায় জড়িত বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, প্রাকৃতিক কারণে সুন্দরবনের জল ও স্থলে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়েছে; যার প্রভাব পড়েছে বাঘের অবস্থান ও ঘনত্বেও। এমন তথ্য উঠে এসেছে এবারের জরিপের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে। গেলো দুই জরিপে খুলনা রেঞ্জে বাঘের সংখ্যা কম পাওয়া গেলেও, এবারে তা বেড়েছে। মোট বাঘের সংখ্যায় এর প্রতিফলন ঘটবে, বলছে বন বিভাগ।
বন বিভাগ আশা করছে, এবারের জরিপে বাড়বে বাঘের সংখ্যা। ২৯ জুলাই বাঘ দিবসে এ জরিপের ফল প্রকাশের কথা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, গত দুই বছর ধরে আমরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঘের ছবি সংগ্রহ করেছি। এবারের জরিপে আমরা প্রচুর বাঘের ছবি পেয়েছি। আমরা প্রায় সাড়ে ১০ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর ছবি পেয়েছি, সেখান থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বাঘের ছবি পেয়েছি, এখান থেকে আমরা ধীরে ধীরে ইউনিক বাঘ কতটি সেটি বিশ্লেষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে লবণাক্ত এলাকা থেকে যে এলাকায় লবণ কম সেখানে বাঘের ছবি অনেক বেশি পেয়েছি। গত দুটি জরিপে খুলনা রেঞ্জে বাঘের ছবি কম ছিল, কিন্তু এবারের জরিপে খুলনা রেঞ্জে প্রচুর বাঘের ছবি পেয়েছি। যেটা সুন্দরবনের মোট বাঘের সংখ্যায়ও ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
তবে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও তার প্রজনন ক্ষেত্র বাড়ানো, বাঘের সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধিরও দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, সুন্দরবনের সঙ্গে বাঘের সম্পর্ক নিবিড়। সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখতে হলে বাঘকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বাঘকে টিকিয়ে রাখতে হলে শুধুমাত্র বাঘ জরিপ করলে বা বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প হাতে নিলেই হবে না, সুন্দরবনের পুরো ইকোসিস্টেমকে নিয়েই কাজ করতে হবে। বাঘের শিকার প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে হরিণ ও শুকরের সংখ্যা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি বাঘের নিরাপদ প্রজনন ও আপদকালীন সময়ে বাঘের নিরাপদ স্থান তৈরি করে দিতে হবে। সব মিলিয়ে বন বিভাগকেই দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বাঘ জরিপ ছাড়াও তিন বছরমেয়াদী বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পে সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম, বাঘের আপতকালীন আশ্রয়ের জন্য ১২টি মাটির কেল্লা নির্মাণ করা হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন