সোমবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৩১ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৯:৪৭ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঠাকুরগাঁও শহরের অদূরে কচুবাড়ি-কৃষ্টপুর গ্রাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শেষে সদ্য স্বাধীন দেশে তরুণদের সামনে দাঁড়ায় নতুন এক লড়াই—অজ্ঞতা আর নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ শেষে দেশ যখন পুনর্গঠনের স্বপ্নে বিভোর, তখন গ্রামের একদল তরুণ-যুবা হাতে তুলে নেন শিক্ষার আলো জ্বালানোর মশাল।
মোকসেদ আলীর নেতৃত্বে আব্দুল খালেক, রিয়াজুল ইসলাম, রমেজা খাতুন, আফাজ উদ্দীন, আব্দুল জব্বার ও হাসিবুল হকসহ ২৪ জন নর-নারী শুরু করেন শিক্ষা আন্দোলন। তাদের স্লোগান ছিল— “টিপ সই ছি ছি, শিখি নাম লিখিতে।” হাটে, মাঠে, উঠোনে কিংবা চুলার পাশে বসেই চলতে থাকে শিক্ষার পাঠ।
মাত্র তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে কচুবাড়ি-কৃষ্টপুর হয়ে ওঠে দেশের প্রথম নিরক্ষরমুক্ত গ্রাম। ফলে সাক্ষরতা দিবস পালনের ইতিহাসে অনন্য মর্যাদা পায় এ গ্রাম।
আজও জীবিত আছেন সেই আন্দোলনের অন্যতম কর্মী রমেজা খাতুন। তিনি বলেন,
“আমরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শিক্ষা আন্দোলনে কাজ করেছি। তখন কাগজ-কলমের অভাব ছিলো, তবুও সবার মুখে ছিলো পড়ালেখার আগ্রহ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মোকসেদ আলীসহ অনেক সহযোদ্ধা অভাব-অনটনে পৃথিবী ছেড়েছেন। কেউ তাদের কথা মনে রাখেনি।”
এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই আজ আর বেঁচে নেই। যারা জীবিত আছেন, তারাও অভাব-অনটনে দিন পার করছেন। অথচ তাদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল গ্রামের মানুষকে নিরক্ষরতা থেকে মুক্ত করার ইতিহাস।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন, এত বড় কৃতিত্বের পরও কেন উপেক্ষিত থেকে গেলেন এই শিক্ষা সংগ্রামীরা? তাদের স্মৃতি সংরক্ষণে কি কোনো উদ্যোগ নেবে প্রশাসন?
কচুবাড়ি-কৃষ্টপুরের এই ইতিহাস শুধু একটি গ্রামের নয়, বরং গোটা জাতির গর্ব। তাই স্থানীয়দের চাওয়া—তাদের অবদানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হোক এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক সেই আলোকযুদ্ধের অনুপ্রেরণার গল্প।
বিজ্ঞাপন