শুক্রবার , ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ২১ ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ০৬:২১ ১৭ মে ২০২৫
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজবাড়ীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এক বিশাল শাহীওয়াল জাতের ষাঁড়, যার ওজন প্রায় ২০ মণ বা ৮০০ কেজি! সুবাস শিকদার নামের এক খামারি এই গরুটিকে চার বছর ধরে সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করেছেন। তার দেয়া নাম—"রাজবাড়ীর রাজা"। দাম হাঁকাচ্ছেন ৮ লাখ টাকা।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়নের লক্ষ্মনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ৬১ বছর বয়সী সুবাস শিকদার বলেন, “আমি রাজাকে চার বছর ধরে সন্তানের মতো যত্ন করে লালন-পালন করেছি। ঈদের জন্য এখন তাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শহরের হাটে নেয়া সম্ভব নয়, তাই বাড়ি থেকেই ভালো খরিদ্দার পেলে দাম দর করে বিক্রি করব।”
গরুটি দেখতে যেমন বিশাল, তেমনি শান্ত স্বভাবেরও। রাখা হয়েছে ছোট্ট একটি গোয়াল ঘরে, যেখানে সারাদিনই ফ্যান ও লাইট চালু রাখতে হয়। খাদ্য তালিকায় রয়েছে খড়, কাঁচা ঘাস, ভুট্টা, খেসারি ও জবের সংমিশ্রণে তৈরি ভূষি। প্রচণ্ড গরমে দিনে দুই থেকে তিনবার শ্যাম্পু ও সাবান দিয়ে গোসল করানো হয় রাজার।
রাজবাড়ীর রাজা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। কেউ কেউ বলছেন, এটি এখন পর্যন্ত এ বছরের রাজবাড়ীর সবচেয়ে বড় ষাঁড়। দর্শনার্থী সুজন বিষ্ণু বলেন, “এটা আমার দেখা সবচেয়ে বড় গরু। যেমন নাম, তেমনি রাজসিক চেহারা।”
সুবাস শিকদারের ছেলে প্রশান্ত শিকদার বলেন, “আমরা সবাই মিলে অনেক কষ্ট করে রাজাকে বড় করেছি। অনেক খরচ হয়েছে। আমাদের বিক্রির লক্ষ্যমূল্য সাড়ে ৮ লাখ টাকা। তবে ভালো ক্রেতা পেলে আলোচনা সাপেক্ষে ছাড়ও দেয়া যেতে পারে।”
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর রাজবাড়ী জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৪৭ হাজার ৯৬৩টি। এর মধ্যে গরু ২৪ হাজার ২৬০টি, মহিষ ২৩২টি এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ২৩ হাজার ৪৭১টি। জেলার চাহিদা অনুযায়ী ৬ হাজার ৩৬২টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওমর ফারুক বলেন, “শাহিওয়াল জাতের গরু সাধারণত আকারে বড় হয়। তবে এত বছর ধরে গরুকে যত্নে লালন-পালন করা খুবই কষ্টসাধ্য। আমরা নিশ্চিত করেছি যে গরুটিকে কোনো ধরনের ক্ষতিকর খাদ্য বা স্টেরয়েড প্রয়োগ করা হয়নি।”
রাজবাড়ীর রাজা এখন কেবল একটি গরু নয়—এ যেন এক আবেগ, ভালোবাসা আর এক খামারির অধ্যবসায়ের গল্প।
বিজ্ঞাপন