রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৭ ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জমে উঠেছে ঐহিত্যবাহী ধানের চারার হাট। পৌরসভার শামসুল হক কলেজ মোড়ের এ হাটটি প্রায় ৬০ বছরের পুরনো। ভোর থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হয়। শতাধিক ব্যবসায়ি প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ লাখ টাকা বেচাকেনা করেন এই হাটে। তবে সার ও ডিজেলের দাম বেশি থাকার কারণে প্রান্তিক কৃষক এবং ডিজেলচালিত সেচ পাম্প মালিকরা চিন্তিত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটে বিভিন্ন জাতের ধানের চারায় সয়লাব হয়েছে। চাষিরা দর কষাকষি করে চারা কিনছেন। চাহিদা বাড়ায় আঁটি প্রতি দাম বেড়েছে ২-৫ টাকা। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, নওগা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, মুক্তাগাছা, কালিহাতী, ঘাটাইল ও সখীপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা কিনে আনেন ব্যবসায়ীরা।
সেগুলো জেলার চাষীদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করছেন। পাশের মানিকগঞ্জসহ অন্য জেলায়ও বিক্রি হয়। এখানে ব্রি ৩৪, ৪৯, ৫২, ৭১, ৭২, ৭৪, ৭৫, ৮৭; বিআর ১১, ২২,২৩; বিনাধান ৭, ১৭, ২০; স্থানীয় জাত নাজিরশাইল, পাইজাম, বিনাশাইল, স্বর্ণা, কালিজিরা, রনজিত, গাইঞ্জা, পাটজাক প্রভৃতি ধানের চারা পাওয়া যায়। ধানের চারাভেদে প্রতি আঁটি (মুঠি) চারা পাঁচ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এলেঙ্গার মশাজান গ্রামের দুলাল হোসেন বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে ধানের চারার ব্যবসা করি। পাহাড়ী উঁচু এলাকা থেকে চারা কিনে এনে এলেঙ্গা হাটে বিক্রি করি। ১০০ আঁটি চারা বিক্রি করলে ১০০/১৫০ টাকা লাভ থাকে। টাঙ্গাইলের দক্ষিণাঞ্চলসহ নিচু এলাকার চাষিরা এখান থেকে বেশি চারা কেনেন। মোহর আলী বলেন, হাঁটটি পুরাতন। চারার বেচাকেনা করেই চলি।
কালিহাতীর ইছাপুর গ্রামের মো. খলিল শিকদার বলেন, আমার নিচু জমিতে চারা তৈরি করলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ হাট থেকে চারা কিনি। এবার ২০০ আঁটি স্বর্না ধানের চারা ১৬৭৫ টাকায় কিনলাম।
কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা মামুন বিজনেস আইকে বলেন, এলেঙ্গা ধানের চারার হাট অনেক পুরাতন এবং জেলার অন্যতম। কেউ কেউ শুধু বিক্রির উদ্দেশ্য চারা উৎপাদন করেন। আবার অনেকে নিজের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত চারাগুলো এখানে বিক্রি করেন। যেসব চাষিরা চারা উৎপাদন করতে পারেন না কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে চারা নষ্ট হয়ে যায়, তারাই চারা ক্রয় করেন। কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ হাটে বেচা-কেনার বিস্তৃতি বৃদ্ধিতে তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. কবির হোসেন বিজনেস আইকে বলেন, এ বছর রোপা আমন মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ১৯০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৯৫ হাজার ১৮০ হেক্টর জমি। চলতি মাসের পুরোটা সময়ই বিভিন্ন জাতের ধানের চারা রোপণ করা যাবে। বিশেষ করে ব্রি ৩৪,৪৯,৫২, বিআর ২২, ২৩, বিনাধান ৭,১৭ জাতের চারাগুলো ভালো।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পে সরকারি ভর্তুকি রয়েছে। ইতিমধ্যে ডিজেলের দামও কিছুটা কমানো হয়েছে। যদি ডিজেলচালিত সেচ পাম্প মালিকদের আরও ভর্তুকি দেওয়া হয়, তাহলে কৃষি খাতে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে না। কৃষকরা পুশিয়ে নিতে পারবেন।
ডিজেলচালিত সেচ পাম্পের একাধিক মালিক জানান, নতুন সরকার এসে ডিজেল দাম কিছুটা কমিয়েছে। বর্তমানে ডিজেলের প্রতি লিটার ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা। এতেও ধানের দামে খরচ উঠতে চায় না। তারা সরকারের কাছে আরো ভর্তুকি দাবি করেছেন।
বিজ্ঞাপন