রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:২৭ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
দেশ স্বাধীনের পর। পেরিয়ে গেছে যুগের পর যুগ। গ্রামে বেড়ে ওঠা মানুষগুলোও কাদা—মাটি মাখিয়ে চলতে চলতে বার্ধক্য কাটিয়ে অনেকেই এখন আর নেই। আবার কেউ বেঁচে আছেন কালের সাক্ষী হয়ে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভাগ্য বদল হয়নি আমতলী উপজেলার ২নং কুকুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড তথা কেওয়া বুনিয়া গ্রামবাসীর স্বাধীনতার ৫৩বছরেও পাকা সড়ক দেখেনি এ গ্রামের মানুষ। ফলে শত শত পরিবারের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। এই গ্রামের মানুষের কাছে এখন পাকা সড়ক যেন আলাউদ্দিনের আশ্চর্য চেরাগের মতো।
জানা যায় পটুয়াখালী কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহা সড়কের পাশে অবস্থিত এই গ্রামটি। এই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ইট পাথরের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও ছোঁয়া লাগেনি এই গ্রামটিতে। মহিষকাটা ওয়াবদা থেকে ব্রিক ফিল্ড ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি আইডি নাম্বার, ৫০৪০৯৪০২৫ দেখলেই মনে হয় অভিশপ্ত একটি গ্রাম। আদমশুমারি অনুযায়ী এই গ্রামে প্রায় তিন হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। এই এলাকায় রয়েছেন প্রথম শ্রেণী কর্মকর্তা, ইঞ্জিনিয়ার, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, প্রবাসী সহ—সাধারণ নাগরিক।
পার্শ্ববর্তী জেলা পটুয়াখালীর মানুষও প্রতিনিয়ত চলাচল করেন এই রাস্তা দিয়ে। পটুয়াখালী কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গ্রামটি থাকার কারণে এই রাস্তাটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। সমগ্র দেশে দৃষ্টান্তহীন উন্নয়ন সাধন হলেও এর ছিটেফোঁটা পড়েনি এ এলাকায়। এর পেছনে জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। গ্রামটিতে দুটি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি নূরানী হাফিজি মাদ্রাসা রয়েছেন। দুটি প্রাইমারি স্কুল গ্রামটির মধ্যম স্থানে থাকার কারণে কমলতি শিক্ষার্থীরা বর্ষার দিনে প্রতিনিয়ত কাদামাটি দিয়ে স্কুলে আসা—যাওয়া একমাত্র রাস্তা । বর্ষার মৌসুমে পা সিটকে পড়ে গেলেই বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাওয়া। এভাবেই প্রতিনিয়ত ছোট ছোট দুর্ঘটনার শিকার হন কোমলতি শিক্ষার্থীরা।
জন্মসূত্রে এই গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী মহাসিন মাদবার ও ফেরদাউস প্যাদা জানান, এই গ্রামের মাটির নির্মিত গ্রামীন সড়কে আজও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যার কারনে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয় দের হাজার পরিবারের প্রায় তিন হাজারও বেশি মানুষ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলে সড়কটির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। প্রধান সড়ক থেকে গাড়ি ঢুকানো যায়না সড়কে। ভোট কেন্দ্রিক জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়নের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এলাকার মানুষের সাথে কেবল প্রতারণাই করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
তারা আরো জানান, বর্তমানে প্রতিটি ঘরে স্কুল—কলেজ ও মাদরাসা পড়ুয়া দুই শতাধিক ছাত্র—ছাত্রী রয়েছে। গ্রামে কোন পাকা সড়ক না থাকায় বৃষ্টি পড়লে সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয় বাসিন্দা, গ্রামের প্রধান সড়কটি শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে সড়কটিতে কাঁদা হয়ে যায়। এই কাদামাটি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে জুতা পড়ে রাস্তায় চলা যায় না। উন্নয়নের কথা শুনলেও চোখে দেখি না। আমাদের রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা দলা গাজী মিয়া মনের কষ্ট নিয়ে বলেন, বয়স প্রায় ১০০র কাছাকাছি, আমাদের গ্রামের কোন পরিবর্তন দেখিনা, মরার আগে পাকা রাস্তা দেখে যেতে পারবো কিনা সেটাও মনে হয় সম্ভব না। সব জায়গায় উন্নয়ন হয় আমাদের এলাকার উন্নয়ন হয় না।
পশ্চিম কেওয়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক লিয়াকত আলি মিয়া বলেন,আমাদের দুঃখ—কষ্ট, দুর্ভোগের কথা কেউ শুনে না। আমাদের ভোগান্তির কথা বলে বোঝানো যাবে না, নিজ চোখে দেখতে হবে। আমরা ঠিকমতো হাটবাজারে যেতে পারি না। আমাদের ছেলেমেয়েরা কষ্ট করে স্কুল—কলেজে যায়। এভাবে কত কাল কষ্ট করতে হবে কে জানে।
এই প্রসঙ্গে কুকুয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জহির মাতুব্বর বলেনঃ মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, সড়কটি অন্তত দরকার। পুরো ইউনিয়নের ভিতরে একমাত্র ওয়ার্ড যেখানে কোন ইট পাথরের ছোঁয়া লাগেনি।
২নং কুকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমেদ মাসুম তালুকদার বলেন, এই গ্রামে এখনো পর্যন্ত কোন পাকা রাস্তা নেই। আমরা রাস্তাটি পাকা করার জন্য আমতলী প্রকৌশলী অফিস,বরগুনা এলজিডি অফিস ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই রাস্তার জন্য কাগজ পাঠিয়েছি। আশা করি খুব শীঘ্রই একটা সুফল পাব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তবে এ রাস্তা এখনো প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। প্রক্রিয়াধীন আছে।
বিজ্ঞাপন