রবিবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৯ ১২ অক্টোবর ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলন যে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় তার প্রতিবাদ-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। তাদের অংশগ্রহণ শুধু আন্দোলনে নতুন উদ্যম যোগ করেনি, বরং এটি সক্রিয়তার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি সামনে নিয়ে এসেছে। আমরা তাঁদেরকে রাগে কাঁপতে দেখেছি, দুঃখে কাঁদতে দেখেছি, চরম দুঃসময়ে সহায়তার হাত বাড়াতে দেখেছি, আহত হতে দেখেছি, শুশ্রূষা করতে দেখেছি। বিজয়ে উল্লাস করতে দেখেছি। এ এক অভাবনীয় দৃশ্য।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব নারী শিক্ষার্থী অগ্রভাগে ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সাদীয়া মাহমুদ মীম। তিনি জীবপ্রযুক্তি ও জিন প্রকৌশল বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী। ইবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
আন্দোলনের সময়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "সবসময় ছিলাম আতঙ্কে। ক্যাম্পাসে থাকাকালীন অনেক হুমকি ধামকির সম্মুখীন হই। যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেখানে আমার খোঁজে যায় কয়েকজন। আমি তাদের চিনিনা। বাড়িওয়ালা সামলে নিয়েছিলো। কিন্তু আমি ওইদিন অনেক বেশি ভয় পেয়ে গেছিলাম। আন্দোলন যখন বেশি বেগবান হয়, তখন সারাদিন রাস্তায় মিছিলে কাটতো, আর সারারাত কাটতো ভাইদের বোনদের উপর হামলার ভিডিও দেখে আর কষ্টে। এমন কোনো রাতের কথা মনে পড়েনা যে রাতে বিগত স্বৈরাচার সরকারের পেটোয়া বাহিনীর হামলা দেখে কান্না করিনি।"
নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে তিনি বলেন, "স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলাম এই প্রত্যাশায় যেন আরেক স্বৈরাচারের আগমন না ঘটে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সকল মানুষের সকল রাজনৈতিক মতবাদের চর্চার স্বাধীনতা আমরা নতুন সরকারের কাছে চাই। আর চাই তার কাজের স্বচ্ছতা বা ট্রান্সপারেন্সি। একমাত্র স্বচ্ছতাই পারে জবাবদিহিতার ক্ষেত্র তৈরি করতে।"
নারীদের নিয়ে সরকারের করণীয় বিষয়ে মীম বলেন, "বর্তমান নারীসমাজ অনেক অংশে এগিয়ে গেলেও সমসাময়িক এবং সামাজিক কার্যাবলিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অনেক কম দেখা যায়। এর কারণ হতে পারে, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। অথবা সম্যক বিষয়ে তার জ্ঞান কম। সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা এই দুরাবস্থা কমিয়ে আনতে সক্ষম। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে নারীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান, দুর্গম গ্রামীণ অঞ্চলে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো, গ্রামাঞ্চলে নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজগুলো বর্তমান সরকারের নারী উন্নয়নমূলক গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে পড়তে পারে।"
ছাত্র রাজনীতির ভাবনায় তিনি বলেন, "রাজনীতি চর্চার বিষয়। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতি চর্চা প্রত্যেক সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য দরকার বলে আমি মনে করি। রাজনৈতিক চর্চার মানে এই নয় যে সক্রিয়ভাবে কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। প্রচুর রাজনৈতিক বিষয়াবলি পড়াশুনা, সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বিস্তর জানাশোনা, দেশের সার্বিক অবস্থায় নিজের চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ এবং দেশের বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একজন রাজনীতির চর্চা করতে পারে। বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্যক অবস্থার ভাবমূর্তি বুঝতে রাজনীতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ছাত্রের জন্য তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ হতে পারে রাজনীতি চর্চার মুক্তমঞ্চ। অধিকার আদায় এবং নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে এই ছাত্ররাজনীতিই পারে ভূমিকা রাখতে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নিকট তার প্রত্যাশা, "একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক অবকাঠামো গঠন করা। শিক্ষার্থীদের অধিকার বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীবান্ধব সকল উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। যেভাবেই হোক,সেশনজট মুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা। ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক আচারানুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক চর্চার জন্য অসাম্প্রদায়িক এবং অসহিংস বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ শিক্ষার্থীদের প্রদান করা যেখানে সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিচয় হবে, সে একজন শিক্ষার্থী। কোনো ধর্ম- জাত-পাত তুলে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার মত পরিবেশ যেন তৈরি না হয়।"
বিজ্ঞাপন